অর্থ বাণিজ্যবাংলাদেশলিড নিউজ

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত থাকছে

এবিএনএ : আসছে বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুইয়াঁ।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দিলে অর্থ পাচার হবে, দেশে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য জরিমানার বিধান রেখে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটা ভিন্নভাবে নিবেন না।
এর আগে আবাসন খাতে কালো টাকা (বৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের নিঃশর্ত সুযোগ চায় রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
রিহ্যাবে প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া  দাবি জানিয়ে বলেন, আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বহাল রেখে বিনিয়োগকৃত অর্থ আয়কর অধ্যাদেশের ১৯৮৪ এর ধারা ১৯বি ধারা সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।
লিয়াকত আলী ভূঁইয়া তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনমানের সঙ্গে আবাসন খাত জড়িত। বর্তমানে আবাসন শিল্প অত্যন্ত নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ ইনডেমিনিটি না থাকার কারণে কাঙ্খিত   বিনিয়োগ আসছে না।
তিনি বলেন, গৃহায়ন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ধারা ১৯বি অবিলম্বে পুন:প্রবর্তন করা হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। কারণ বর্তমানে বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গ্রহণের সুযোগ থাকায় দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে, এই সব দেশে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের অর্থের উৎস বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না।  অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হলে ভবিষ্যতে ওসব বিনিয়োগকারী ট্যাক্স-নেটের আওতায় চলে আসবে। রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের আয়কর হ্রাস করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে দেশের গৃহায়ন শিল্প জটিল সংকট আবর্তিত হচ্ছে।  তাই আগামী বাজেটে আবাসিক এলাকায় (গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল) প্রতিবর্গ মিটারে ব্যক্তি আয়কর ৫০০ টাকা ও অনাবাসিক এলাকায় (গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল) ১ হাজার টাকা, আবাসিক এলাকায় (ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, উত্তরা, ডিওএইচএস, কাওরান বাজার, খুলশী, আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ) আয়কর ৪৫০ টাকা এবং অনাবাসিক এলাকায় ৮০০ টাকা এবং অন্যান্য আবাসিক এলাকায় ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর তিনশ টাকা ও  অনাবাসিক এলাকার ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়।
রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট কর ও ডিউটি হ্রাস করার প্রস্তাব করে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে ফ্ল্যাট ও প্লট রেজিস্ট্রেশন ব্যয় উচ্চ থাকায় অধিকাংশ ক্রেতা রেজিস্ট্রেশনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে এ খাত থেকে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই রেজিস্ট্রেশনে গেইন ট্যাক্স ২ শতাংশ, ষ্ট্যাম্প ফি ১ দশমিক ৫ শতাংশ ও রেজিস্ট্রেশন ফি ১  শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ১ শতাংশ ও মূল্য সংযোজন কর ১ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়।
একই সঙ্গে রাজউক ও সিডিএ এর আওতাভুক্ত ও বহির্ভূত এলাকার সব জমির ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশের ৫৩এইচ ধারায় প্রযোজ্য ৪ ও  ৩ শতাংশ তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
এছাড়া রিহ্যাব সিঙ্গেল ডিজিটে সুদে দীর্ঘমেয়াদী রিফাইন্যান্সিং চালু এবং ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন, সাপ্লায়ার ভ্যাট ও উৎস কর সংগ্রহের দায়িত্ব থেকে ডেভেলপারদের ৫ বছরের অব্যাহতি দেওয়াসহ ১২টি দাবি জানায়।
এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এনবিআরের বিভিন্ন বিভাগের সদস্য, কর্মকর্তা ও নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button