আমেরিকালিড নিউজ

আমিরাতে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির দুয়ার প্রশস্ত করবে নতুন চুক্তি

এবিএনএ : কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা আমিরাতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির পথ আরও প্রশস্ত করবে। ঐতিহাসিক এ চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে গতকাল শুক্রবার বিশেষজ্ঞরা এমন পূর্বাভাস দিলেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েল গত বৃহস্পতিবার একটি চুক্তির ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ওই চুক্তি হয়। ওই দুই দেশে জানায়, তারা চুক্তির আওতায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে এবং ব্যাপক পরিসরে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য জানিয়েছেন, এ চুক্তির আওতায় ইসরায়েল নতুন করে দখলকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখলে নেবে না। যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড ইসরায়েলে অন্তর্ভুক্তিকরণ থেকে তাঁর সরকার এখনো সরে আসেনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন বছর পর ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশশাসিত ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্ম হয়। পশ্চিমা বিশ্বের বানানো এ রাষ্ট্রকে কখনো মেনে নেয়নি আরবরা। ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও সবশেষ ১৯৭৩ সালে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ হয় ইসরায়েলের। প্রতিবারই আরবরা পরাজিত হয়। এরপর থেকেই ইহুদিদের কাছে জমি হারাতে থাকে ফিলিস্তিনিরা। বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করছে ইসরায়েলের প্রশাসন। জমি উদ্ধারের জন্য ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দুটি রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সংঘাত মেটানোর চেষ্টা করলেও তা এখনো সফলতার মুখ দেখেনি। তবে পুরোনো শক্র ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা একমাত্র উপসাগরীয় আরব দেশ আমিরাত। আর আরব দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়। এর আগে পুরোনো শত্রু ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে মিসর ও জর্ডান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন চুক্তির কারণে আরব আমিরাতের সঙ্গে নানা বিষয়ে চুক্তি হবে ইসরায়েলের, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইসরায়েলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রাইডম্যান গত শুক্রবার ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমিরাত যত বেশি ইসরায়েলের বন্ধু হয়ে উঠবে, ইসরায়েলের অংশীদার হয়ে উঠবে, যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক মিত্র হয়ে উঠবে, আমি স্পষ্টতই মনে করি, এটা হুমকির মূল্যায়নকে বদলে দেবে এবং ভবিষ্যতে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে আমিরাতের সুবিধা নিরূপণে কাজে দেবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি কমে যাবে আমিরাতের সঙ্গে চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা সবার আগে। তাই তো আরব দেশগুলোর কাছে যেসব অস্ত্র বিক্রি করে দেশটি, তার চেয়ে আরও অত্যাধুনিক অস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়া হবে, এমন নিশ্চিয়তা অনেক আগেই দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একটি উদাহরণ হচ্ছে, এফ–৩৫ নামে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ইসরায়েলের কাছে বিক্রি ও যুদ্ধের সময় তা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু আরব আমিরাত বর্তমানে ওই যুদ্ধবিমান কিনতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্ট পলিসির আরব–ইসরায়েল রিলেশনস–বিষয়ক প্রকল্পের পরিচালক ডেভিড মাকোভস্কি বলেন, এই চুক্তি আমিরাতের জন্য একটি বিজয়। কারণ, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে, এমন আশঙ্কায় এর আগে দেশটির কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র বেচত না ওয়াশিংটন। এখন নিশ্চিতভাবে সেটি কিনতে পারবে আমিরাত। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আমিরাতের কাছে ৪ হাজার ৫৬৯টি পুরোনো মাইন রেসিস্ট অ্যাম্বুশ প্রটেক্ট (এমআরএপি) যান বিক্রির অনুমোদন দেয়, যার মূল্য ৫৫ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। তবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর কাছে ট্রাম্প প্রশাসনের অস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনায় লাগাম টানার চেষ্টা করছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা।

Share this content:

Back to top button