
এবিএনএ : সবার জন্য বাসস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আরও দুই লাখ ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটিকে দ্বিতীয়বাবেরর মত সংশোধন করে এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে গৃহহীন মানুষদের নিজস্ব বাসস্থান নিশ্চত করবে সরকার।
মঙ্গলবার রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সভায় এ প্রকল্পসহ পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। পুরো অর্থই আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, একনেক সদস্য, প্রতিমন্ত্রী ও অন্যান্য সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ।
১৯৯৭ সালে ঘুর্ণিঝড়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব জেলা কক্সবাজারসহ উপকূলীয় অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঝড় ও নদী ভাঙ্গনে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। তৎকালীন সরকার ওই সময় এসব গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রকল্প চালু করে। পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রথম পর্যায়ে নেওয়া প্রকল্পটি ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন করা হয়। তাতে ৪৭ হাজার ২১০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। এরপর ২০০২ সালে ৬৫ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন ও দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ‘আশ্রয়ণ-১’ নামে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বর সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ৬০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৮ হাজার ৭০৩টি পরিবারকে দ্বিতীয পর্যায়ে পুনর্বাসন করা হয়। এরপর আরও ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসের লক্ষ্যে দুই হাজার ২০৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্প নেওয়া হয়। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৯৯৬ কোটি ব্যয়ে ৩৭ হাজার ৭৭৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার সংবিধানের ঘোষণা ‘সবার জন্য বাসস্থান’ নিশ্চিত করার কর্মসূচি নিয়েছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পটি দ্বিতীয়বার সংশোধন করে বরাদ্দ ও মেয়াদ বাড়ানো হলো। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। এসময়ে চার হাজার ৮৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট দুই লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, এজন্য দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাদের তাদের জেলা-উপজেলায় কতজন গৃহহীন পরিবার রয়েছে তার তালিকা পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্প সরকার খাস জমিতে বাস্তবায়ন করেছে। এবার প্রয়োজন হলে জমি কিনে, আবার যেসব পরিবারের জমি আছে, ঘর নেই তাদেরকেও প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে দুই হাজার ৯২৬টি পাকা ব্যারাক, নয় হাজার ৩১টি সিআই শীটের ব্যারাক, এক হাজার ৭৮২টি সেমি পাকা ব্যারাক নির্মাণ করা হবে। জমি আছে ঘর নেই এমন পরিবারের জন্য তিন হাজার ৭১০টি সেমি পাকা ঘর ও এক লাখ ৭০ হাজার সিআই শীটের ঘর নির্মাণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় বিশেষ নৃগোষ্ঠীদের জন্য ৫৮০টি বিশেষ ধরনের ঘর ও ২০টি টং ঘর নির্মাণ করা হবে। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারনের জন্য ওই এলাকার চার হাজার ৪০৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। ওইসব পরিবারের জন্য ওই জেলার খুরশকূল মৌজায় ১৩৯টি পাঁচতলা ভবন, একটি টাওয়ার, একটি শুটকি মহল, একটি মসজিদ, ৯০০ কমিউনিটি সেন্টার ও ৪০০ ঘাটলা নির্মাণ করা হবে। এসব প্রকল্পেরর প্রয়োজনীয় রাস্তা, কালভার্ট, নিরাপত্তা দেওয়াল, বিদ্যুৎ সংযোগ, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
এছাড়া সিলেট অঞ্চলে ছয়টি আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত করা হবে। ১৪৯ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করা হবে। এছাড়া ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার হেতেমদী থেকে সাগরদী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক সভা। সভায় ১১১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাট থেকে জেলার চিতলমারী হয়ে গোপালগঞ্জ জেলার পাটগাতী পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিলার সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ‘প্রযুক্তির সহায়তার নারীর ক্ষমতায়ণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশের বড় ২১টি জেলার ২১টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ফ্রিল্যান্সার, আইটি সেবাদাতা, কল সেন্টার এজেন্ট হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণার্থীদের ৬ হাজার ৭২০টি ল্যাপটপ অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে।
Share this content: