জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

শরীফ আইনের বাইরে অনেক কাজ করেছেন: দুদক সচিব

এবিএনএ : দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের চাকরিবিধি পরিপন্থি কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যই মো.শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘শরীফ আইনের বাইরে অনেক কাজ করেছেন।’ গত বুধবার রাতে দুদক চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মো.শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার খবর আসে। দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে আলোচিত কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করায় সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে নিন্দার ঝড় উঠে। এ নিয়ে সাংবাদিকরা দুদকের মন্তব্য জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘শরীফ উদ্দিন কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী যা মানা প্রয়োজন সেগুলো না মেনে অব্যাহতভাবে এই বিধির পরিপন্থি কাজ করে আসছিলেন। এই কারণে কমিশন মনে করেছে, কমিশনের ভাবমূর্তির স্বার্থে এবং সকলে যাতে সঠিকভাবে কাজ করেন সে লক্ষ্যে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘শরীফ উদ্দিন আইনের বাইরে অনেক কাজ করেছেন, সেজন্য চাকরি বিধির ৫৪ (২) ধারাটি তার ক্ষেত্রে কার্যকর করা হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, ৫৪(২) ধারাটি সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে। এটি একেবারে শেষ এবং চরম পর্যায়ে প্রয়োগ করা হয়। শরীফ উদ্দিনের বিষয়টি তারই অংশ।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব আরও বলেন, ‘শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালু ছিল, আরও অভিযোগ এসেছে, আরও আসতেছিল। তার সম্পর্কিত একটি তদন্তে দুর্নীতির টাকা উদ্ধারকালে তিনি যে কাজ করেছিলেন তাতে হাইকোর্টও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে চাকরিবিধি পরিপন্থির কাজের কারণেই তাকে অপসারণ করা হয়েছে।’

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দুদকের আলোচিত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন চাকরিচ্যুত হওয়ার পর বলেছেন, কিছুদিন আগে একটি পক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।

দুদকের আলোচিত এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকে আমি পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছি। অথচ আমি কোনো অন্যায় করিনি, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি। সেই কারণে চাকরিচ্যুত হলাম।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গত ৩০ জানুয়ারি আমাকে ফোন করে বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যেই আমার চাকরি খাওয়া হবে। সে হুমকির পর দুই সপ্তাহ পর গতকাল (বুধবার) আমাকে চাকরিচ্যুত করা হল।’

একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা হয়েছে। অনেকগুলো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বলছে, আমি চাকরিবিধির বিরুদ্ধে গিয়ে এমন কিছু করেছি যাতে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। কিন্তু কিভাবে আমি তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করলাম তা আমি জানি না। তারা বলছে, আমি নাকি ১০০ কোটি টাকার মালিক!’

শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৩০টিরও বেশি জিডি দায়ের করা হয়েছে, যেগুলোর তদন্ত চলছে। শরীফ দাবি করেন, ‘এই জিডিগুলো ভুয়া।’

চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় শরীফ উদ্দিন ২০২১ সালের ১৬ জুন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন তার সহকর্মীরা। তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। একইসঙ্গে প্রশাসনিক নানা হয়রানি বন্ধের দাবি জানানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর দুদকের সামনে এ মানববন্ধন হয়। বক্তারা অভিযোগ করেন, স্বাধীন সংস্থা হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তারা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যার বলি হয়েছেন উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীন। তারা দাবি করেন, চট্টগ্রামে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৫২টি মামলা করায় তাকে বদলি করা হয়েছিল পটুয়াখালীতে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button