
এবিএনএ : নববর্ষে হামলার আশঙ্কায় বাংলাদেশে নিজ নাগরিকদের সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যাপক লোক সমাগম হয় এমন এলাকাগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশে দেশটির দূতাবাস। দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেয়া এক বার্তায় বিশেষ করে পশ্চিমারা নিয়মিত যায় এমন স্থানগুলোতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েসবাইটে এই সতর্কতার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। নববর্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগের মধ্যে এ সতর্কতা জানালো মার্কিন দূতাবাস।
তবে যোগযোগ করা হলে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজন অ্যান্ট ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সহকারী উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘তারা কীসের ভিত্তিতে সতর্কতা জারি করেছে তা আমরা জানি না। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট নিরাপদ।’
নববর্ষের আগে শনিবার রাত আটটা থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই সঙ্গে সন্ধ্যার পর উন্মুক্ত স্থানে জমায়েতও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঘরোয়া পরিবেশে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করা গেলেও সে জন্য পূর্বানুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিজ নাগরিকদেরকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ব্যবস্থা নিয়েছে সেগুলো মেনে চলা উচিত। বার্তায় বলা হয়, ‘ছুটির সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো। বাংলাদেশের চলমান নৃশংস জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে সাবধান থাকতে হবে।’
বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার নববর্ষের সময় বাড়তি নিরাপত্তা এবং সতর্কতা অবলম্বন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বাংলাদেশ ট্রাভেল ওয়ার্নিং দেখতে অনুরোধ করা হলো।
বার্তায় এও বলা হয়, ‘১০ জুলাই জারি করা ভ্রমণ বিষয়ক সতর্কবার্তা বলবৎ রয়েছে এবং জঙ্গি হামলার আশঙ্কা এখনো রয়েছে।’
২০১৫ সালের শেষ দিকে গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যার পর একবার নিজ নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। সেটি পরে তুলেও নেয়া হয়। পরে চলতি বছরের গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর নিজ নাগরিকদের জন্য আবার ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে দেশটি। ওই হামলায় ১৭ বিদেশিসহ মোট ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা।
ওই হামলার পর জঙ্গিদের পক্ষ থেকে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর আরও হামলার হুমকি দেয়া হয়। এরপর পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ছয়টি আস্তানায় সন্দেহভাজর ২৯ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। পুলিশ বলছে, তাদের অভিযানে জঙ্গিরা শক্তি হারিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস মনে করে বাংলাদেশে উগ্রবাদীদের হামলার আশঙ্কা এখনও রয়ে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশ সম্প্রতি সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী এসব আস্তানা থেকে বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। কর্মকর্তারা হামলার পরিকল্পনার কথাও বলেছেন।
গত শনিবার রাজধানীর দক্ষিণখানের পূর্ব আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় সবশেষ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খল বাহিনী। এই অভিযান চলাকালে এক নারী আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন। এর আগে গত ২৬ জুলাই মিরপুরের কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় সন্দেহভাজন নয় জন, ২৮ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতার মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত তামিম চৌধুরীসহ তিন জন, ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে আর্টিজান হামলাকারীদের প্রশিক্ষক হিসেবে চিহ্নিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, ১০ সেপ্টেম্বর আমিজপুরে জঙ্গিদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তানভীর কাদেরী, ৮ অক্টোবর গাজীপুরের পাতারটেক আস্তানায় আট জন, টাঙ্গাইলের কাগমারীতে চারজন এবং আশুলিয়ার বসুন্ধরারটেকে জঙ্গি তৎপরতার নেতৃত্বে থাকাদের অন্যতম সারোয়ার জাহান এবং সবশেষ গত শনিবার পূর্ব আশকোনায় দুই জন নিহত হয়।
Share this content: