
এবিএনএ : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘উচ্চ আদালত এখন বিভিন্ন বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেক রায় দেয়। অনেকে অনেক বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এই উচ্চ আদালত কোথায় ছিল? তাদের বিবেক কি তখন বন্দী ছিল?’
বুধবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দেয়নি। আমি জানি না যারা বাংলাদেশে তখন বিবেকবান ছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকিরা তো কোনো কথা বলেননি। বিদেশিদের মতো বিবেক কয়জন দেখিয়েছে?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেইমান-মুনাফিক মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে খুন করে তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বেইমানরা বেশি দিন থাকতে থাকতে পারে না। মীর জাফর সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে বেইমানি করে টিকতে পারেনি, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেইমানি করে মোশতাকও টিকতে পারেনি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এটা খুব স্পষ্ট যে, মোশতাকের ডান হাত ছিল জিয়া। কর্নেল ফারুক তার ইন্টারভিউতে স্পষ্ট করে বলেছে। সায়েমকে হটিয়ে জিয়া পরবর্তী সমযে রাষ্ট্রপতি হন। জিয়া মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসারদের খুন করেছে।’ জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার পথ রুদ্ধ করে দেয় বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কি এই দেশের নাগরিক না? আমাদের কি বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না। আজ আমার কাছে অনেকেই স্বজন হারানোর বিচার চান। একদিন এই বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমরা এই বিচারকাজ শুরু করি। প্রথমবার শেষ করতে পারিনি, দ্বিতীয় দফায় এসে এটা সম্পন্ন করেছি।’
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জিয়াউর রহমান রক্ষা করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে জিয়া পুনর্বাসন করেছিলেন। তাদের যোগ্যতা কী? যোগ্যতা হলো তারা খুনি। তারা খুন করে জাতির পিতাকে, শিশুকে, নারীকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু নামে কেউ ছিল এটাও ভুলিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখানো হতো না। অন্যদের সঙ্গে কোথাও বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকলে তা ঢেকে রাখা হতো।’
ইতিহাস বিকৃত করে শহীদদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছিল বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার সঙ্গে কী অমানবিক আচরণ করা হয়েছিল এর বিবরণও দেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করে তার কন্যা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। এদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে, স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন।’ ফাঁসির মুখেও তিনি নতি স্বীকার করেননি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে। কারণ তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। যারা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে তারাই ছিল ক্ষমতাসীনদের কাছে উপেক্ষিত। দেশটাকে তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে।’
এ সময় তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিভিন্ন দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরেন। নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি জোটের নাশকতার বিবরণও দেন তিনি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।
Share this content: