কার কথা সত্যি?

এ বি এন এ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রার্থী ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন ও রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময়) সকালে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। নিউইয়র্কের হেম্পসটিডের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে তাঁদের এই বাগ্যুদ্ধ। এ সময় তাঁরা পরস্পর অভিযোগের তির ছোড়েন। এসব অভিযোগের কতটা সত্যি, কতটাই-বা মিথ্যা, তা যাচাইয়ের চেষ্টা করেছেন সিএনএনের ‘সত্যতা যাচাই দল’।
প্রথম বিতর্কে জলবায়ু পরিবর্তন, কর্মসংস্থান, আবাসন, ট্রাম্পের ব্যবসা, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ—এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। সিএনএনের যাচাই দলের পর্যালোচনায় এসব ইস্যুতে হিলারির বক্তব্যের সত্যতাই বেশি। ট্রাম্প বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উল্টোপাল্টা কথা বলেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দুজনের বক্তব্যের বিশ্লেষণ করেছেন সিএনএনের সংবাদকর্মী লরা কোরান। ক্লিনটন বলেছেন, ট্রাম্প মনে করেন, চীনারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তবে ট্রাম্প তা অস্বীকার করেন। এখন প্রশ্ন হলো, দুজনের মধ্যে কে সত্যি, আর কে মিথ্যা বলছেন?
২০১২ সালের ৬ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, চীনাদের জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর ট্রাম্প আবার টুইট করেন, যুক্তরাষ্ট্রের চালাকির কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প আবার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরও চিন্তাভাবনা করা দরকার। দুঃখের বিষয়, চীন এ নিয়ে কোনো ভূমিকা রাখছে না।
মার্চ মাসে আবার কথা ঘোরান ট্রাম্প। ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা সম্পাদকীয়তে তিনি বলেন, তিনি মনে করেন না মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণেই এমন পরিবর্তন হচ্ছে। পরে ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেন, কৌতুক করে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তিনি চীনকে দায়ী করেছেন।
সিএনএনের যাচাই দল মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ট্রাম্প বারবার তাঁর অবস্থান বদলেছেন। চীনকে দায়ী করার বিষয়ে হিলারির অভিযোগ সত্য।
কর্মসংস্থান
বিতর্কে হিলারি বলেন, তাঁর অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় এক কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ৩৫ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে সিএনএন। মুডির বিশ্লেষক মার্ক জান্দি বলেন, অর্থনীতির গতিশীলতার কারণেই ৭০ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। হিলারি উদ্যোগ নিলে আরও ৩৫ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের আরেকটি বিশ্লেষণ বলছে, হিলারির অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালে দুই লাখ বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ৪০ লাখ চাকরির সুযোগ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই হিলারির বক্তব্য সত্য। তবে এতে তথ্যগত কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে।
ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ
ট্রাম্পের অভিযোগ, বাণিজ্য চুক্তি ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) অনুমোদন করতে চেয়েছিলেন হিলারি। উত্তরে হিলারি বলেন, তিনি আশা করেছিলেন এটি ভালো চুক্তি হবে। কিন্তু চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় তিনি বুঝেছেন, এটি ততটা ভালো নয়। চুক্তির দায়ভারও তাঁর নয়।
সিএনএনের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বলছে, ২০১২ সালে টিপিপি চুক্তির পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন হিলারি। কিন্তু ২০১৫ সালে এসে তিনি টিপিপির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। ওই সময় হিলারি এটাও বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি টিপিপি প্রত্যাখ্যান করবেন। অর্থাৎ, ট্রাম্পের অভিযোগের আংশিক সত্য। হিলারি টিপিপির পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এ কথা কখনো বলেননি যে তিনি সেটি অনুমোদন করবেন।
ট্রাম্পের ব্যবসা
ট্রাম্প সব সময় দাবি করেন, তিনি আত্মনির্ভরশীল। নিজের চেষ্টায় আজকের অবস্থানে এসেছেন। তাঁর এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন হিলারি। তিনি বলেন, আসলে ট্রাম্প খুবই ভাগ্যবান। তিনি ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। আর এই অর্থ তিনি ধার করেছিলেন তাঁর বাবার কাছ থেকে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, ১৯৮৫ সালে ট্রাম্পের ক্যাসিনো ব্যবসায় নেওয়া লাইসেন্স থেকে বোঝা যায়, সে সময় ট্রাম্প তাঁর বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের কাছ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণ নিয়েছিলেন। সময়টা ছিল আশির দশকের শেষে। এটা ঠিক যে ব্যবসা শুরুর সময় ট্রাম্পের কাছে মাত্র ১০ লাখ ডলার ছিল। এর পাশাপাশি এটাও সত্যি যে ট্রাম্প তাঁর বাবার কাছ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণ নিয়েছিলেন।
Share this content: