এ বি এন এ : আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নতুন ঠিকানায় যাচ্ছে। কয়েক দফা পেছানোর পর অবশেষে ওই দুই দিনে পর্যায়ক্রমে সাড়ে চার সহস্রাধিক বন্দি, কয়েদি ও হাজতিকে কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর করা হবে। ওই দুই দিন কারাগার স্থানান্তর প্রায় নিশ্চিত উল্লেখ করে কারা অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া গেছে। বিশেষ সমস্যার সৃষ্টি না হলে ওই সময় কারাগার স্থানান্তর প্রায় নিশ্চিত। কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন বিশেষ নির্দেশনা না সলে ওই তারিখেই স্থানন্তর নিশ্চিত। নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল সংখ্যক সদস্য রাস্তায় রাস্তায় প্রহরায় নিয়োজিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এদিকে, কারাগার স্থানান্তরের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কর্মবণ্টন নিয়ে কারা অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই বন্দিদের কয়টি প্রিজন ভ্যান বা বিকল্প যানবাহন কতগুলো লাগবে, কোন ধরনের বন্দিদের প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন পাঠানো হবে, কারা প্রহরীরা ছাড়াও কোন সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন এ ব্যাপারে রোডম্যাপ তৈরি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ পর্যন্ত সারাদেশে বন্দির সংখ্যা ৬৮ হাজার ২৫৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬ হাজার ৬৪৭। এসব বন্দির প্রায় সকলেই পুরুষ। কেরানীগঞ্জের কারাগারটি পুরুষ কারাগার হওয়ায় ইতোমধ্যেই প্রায় সব নারী ও শিশু বন্দিকে কাশিমপুরে স্থানান্তর করা হয়। কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে প্রায় ১৯৪ একর জায়গার ওপর চার শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এশিয়ার সর্বাধুনিক ও বৃহত্তম এই কারাগারটি। এর ধারণক্ষমতা প্রায় ৮ হাজার। ১৯৮০ সালের দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে বেশ কয়েকটি বড় আবাসিক ভবন গড়ে ওঠে। এতে কারাগারের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা উভয়ই বিঘ্নিত হচ্ছে বলে উপলব্ধি করে তৎকালীন সরকার। সে বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাউন্সিলের একটি সভায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সরানোর বিষয়টি প্রথম উঠে আসে। ১৯৯৪ সালে একে চূড়ান্তভাবে সরিয়ে দুটি কারাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে একটি গাজীপুরের কাশিমপুরে ও অন্যটি কেরানীগঞ্জে। অবশেষে ২০০৬ সালে একনেকে কেরানীগঞ্জে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের কাজ। বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০১১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু পরে তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৭ সাল পর্যন্ত। আগামী ২৯ ও ৩০ জুন কারাবন্দি স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এখন পর্যন্ত ওই সময়ে বন্দি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। বিশেষ নির্দেশনা না আসলে ওই দুই দিনে বহু বছরের প্রাচীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে নতুন কারাগার উদ্বোধন করেন। এরপর বন্দি স্থানান্তরের জন্য তারিখ নির্ধারণ হলেও নানা কারণে কার্যকর হয়নি।