জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

ক্যাসিনোর টাকার ভাগ কে কে পেতেন, নাম বলছেন খালেদ

এবিএনএ: কোটি কোটি টাকার ক্যাসিনো সেটাপ, নারী-পুরুষ এনে সেগুলো পরিচালনা করাসহ নানা অবৈধ কাজ চলতো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ইয়ংমেন্স ক্লাবে। এত বড় আয়োজনের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জানতো না? জানলেও তারা চুপ ছিল কেন?

আটকের পর র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে খালেদ মাহমুদকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‍্যাব। ক্যাসিনো থেকে উপার্জনের টাকা কার কার কাছে যেত, সে নিয়েও প্রশ্ন করা হয় তাকে। এর আগে বুধবার রাতে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র‍্যাব। আটকের পর তাকে র‍্যাব-৩ এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে মতিঝিলের ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি মতিঝিল থানা পুলিশ, মতিঝিল জোন, পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপি সদর দফতরের কর্মকর্তারা জানতেন বলে দাবি করেন খালেদ। তবে পুলিশের সঙ্গে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি তিনি। সূত্র জানায়, খালেদের ক্যাসিনোর বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থা এবং রাজনীতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জানতেন। তাদের ‘ম্যানেজ করে’ ক্যাসিনো চালাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, তাকে আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র‍্যাব।সূত্র জানায়, তাকে আজ দুপুরে গুলশান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। হস্তান্তরের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠাবে গুলশান থানা পুলিশ।

গ্রেফতারের সময় খালেদের বাড়ি থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা, লকার থেকে ১০০০, ৫০০ ও ৫০ টাকার বেশ কয়েকটি বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। সেগুলো গণনার পর ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া ডলারেরও বান্ডিল পাওয়া যায়। টাকায় তা ৫-৬ লাখ টাকা হবে বলে র‌্যাব জানায়। এছাড়া তার কাছ থেকে মোট ৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। যার একটি লাইসেন্সবিহীন, অপর দুটি লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ করে রাখা হয়েছিল। এদিকে খালেদকে রাতে আটক ও ঢাকায় একের পর এক ক্যাসিনোর সন্ধানের সংবাদ দেখে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন জেনেও কেন এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি? আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে এটা তাদের চরম ব্যর্থতা।

‘ঢাকায় ক্যাসিনো : ৮ লাখ টাকা হাওয়া এক শিক্ষার্থীর’ শিরোনামে ২০১৭ সালে একটি প্রতিবেদন করা হয়েছিল। সে সময় কাছে পুলিশের রমনা বিভাগ, তেজগাঁও বিভাগ ও মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) তাদের এলাকায় ক্যাসিনো থানার কথা অস্বীকার করেছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে থাকা তালিকা অনুযায়ী এই ৩ বিভাগেই রয়েছে ক্যাসিনো।

ক্যাসিনো অভিযানের সর্বশেষ অবস্থা

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার মোট চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‍্যাব। এর মধ্যে মতিঝিলের ইয়াংমেন্স ক্লাব থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার নগদ টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামক ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‍্যাব। কাউকে না পেয়ে ক্যাসিনোটি সিলগালা করা হয়। মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা, ২০ হাজার ৫০০ জাল টাকাসহ ক্যাসিনোটি গুড়িয়ে দেয়া হয়।

গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকাসহ ক্যাসিনো পরিচালনা ও খেলার অভিযোগে মোট ৪০ জনকে আটক করা হয়। এসব অভিযানে মোট ১৮২ জনের মধ্যে ৩১ জনকে ১ বছর করে এবং বাকিদের ৬ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন র‍্যাবের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button