

আজ মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ সচিব সেলিম রেজা, অতিরিক্ত সচিব ড. আহমদ মুনিরুছ সালেহীন, বাংলাদেশ বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রমিক্ষণ ব্যুরোর মহা পরিচালক শামসুল হক, ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের মহা পরিচালক গাজী জুলহাসসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ সেন্টার করার একটি উদ্দেশ্য আছে। অনেক উপজেলা থেকে বিদেশে যাওয়ার মানুষের হার খুবই কম। আমরা চাই বিদেশে যাওয়ার সুযোগ থাকলে সারা দেশে সবার জন্য থাকা উচিৎ। এজন্য সরকারের ইশতেহার অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে এক হাজার দক্ষকর্মীকে বিদেশ পাঠাবো। এটা বাস্তবায়নের জন্য সব উপজেলায় প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করা হবে। চলতি ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্স সাড়ে ২১ শতাংশ বেড়ে গেছে। আমি এটা বলবো আমাদের বিদেশী কর্মীদের বিজয়। তবে এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এটা নির্ভর করে শ্রমিকদের ওপর।
শিঘ্রি মালয়েশিয়ার বাজার খোলবে জানিয়ে তিনি বলেন, কম খরচে অভিবাসনে আমরা কর্মী পাঠাতে চাই এটাই আমাদের মুল লক্ষ্য। একইসঙ্গে নতুন নতুন বাজার খোলাও আমাদের লক্ষ্য। তবে অনেক বাজার খোলা হয়েছে অনেক বাজার হয়নি। অবার অনেক বাজারে সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে সমস্যাটা আমাদের না বিদেশের। যেমন মালয়শিয়ার বাজার নিয়ে যে সমস্যা সেটা তাদের আমাদের এখানে কোন সমস্যা নেই। আমরা চাবি হাতে নিয়ে বসে আছি যে কোন মূল্যেই দরজা খুলে দিব। তারা দুই বার তারিখ পিছিয়েছে। তাই এবার বাজার খোলবে। তা না হলে তাদের অর্থনীতি নিন্মমুখী হয়ে যাবে। তাই আমি বলতে পাড়ি শিঘ্রি মালয়েশিয়ার বাজার খোলবে।
ফেরত আসা শ্রমিকদের পুনর্বাসনে সরকার কি করছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বলেন, যতই দালাল চক্রের কথা বলেন, যেখানে যেখানে প্রতারনা, লাঞ্চনা বঞ্জনার খবর আসে সেগুলো জণগনের সামনে ভালো ভাবে তুলে ধরতে হবে। গত কয়ক মাসে আমাদের অনেক নারী শ্রমিক ফিরত এসেছে। লাঞ্চনা, হয়রানিসহ সব কিছু মিলিয়ে গত ১০ বছরে ৯ হাজার নারী কর্মী ফেরত এসেছে। যে সমস্ত দেশ থেকে নারী কর্মীরা ফেরত এসেছে সেসমস্তো দেশের সঙ্গে আলোচনা হয়। ফলে এখন থেকে প্রবাসী মেয়েরা আরও নিরাপদে থাকবে। এ অবস্থা আরও ভালো হবে। আমি বিশ্বাস করি আর একটি মেয়েও লাঞ্চিত হয়ে আর দেশে ফিরবে না। কারণ সৌদি সরকার নতুন একটি সেলগঠন করেছে। সেখানে অভিযোগ গেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিবে। এছাড়া আগে মামলা করলে কর্মীকে সে দেশে থাকতো হতো এখন দূতাবাসকে পাওয়ার দিয়ে চলে আসতে পারে। একই সঙ্গে কফিলদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, যারা নির্যাতিত হয়ে ফেরত আসছে তাদের জন্য সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে আরও নেবে। যেমন তারা আসার পর তাদের বাড়ি পৌছে দেয়া, বিমানবন্দরে পাশাই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা, নগদ ৫ হাজার টাকা প্রদান করা, পরবর্তীতে বিদেশ যেতে চাইলে সে ব্যবস্থা করা, প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমিকে রুপান্তর করা। এছাড়া তারা যদি ব্যবসা করতে চায় তাহলে স্বল্প সুদে প্রবাসী ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
নতুন বাজারের কি অবস্থা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, জাপানে বর্তমানে দক্ষকর্মী যাচ্ছে আরও নিবে। ভিয়েতনাম ও সিশেল যাওয়া শুরু হয়েছে। পশ্চিম ইউরোপের দেশ গুলোতে লোক পাঠানো হবে বাজার দেখার জন্য। উগান্ডা, কম্বোডিয়া, ক্রোরেশিয়া ও রোমানিয়ায় আলোচনা হচ্ছে। তবে সেখানে জমির দাম কম তাই আমাদের উদ্যোক্তারা যদি সেখা জমি কিনে কিছু করতো তাহলে তারা দেশ থেকে শ্রমিক নিতে পারতো। কারণ ২০০০ ডলার দিলেই এক বিঘা জমি পাওয়া যায়। তাই দেশের বিনিয়োগকারীদের সে সমস্তো দেশে বিনিয়োগেন আহবান জানান তিনি।
বিদেশে মৃতব্যাক্তিদের মৃত্যুর কারণ ও শ্রম ইউয়িং এ জনবল নিয়োগের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাভাবিক মৃত্যু হলে কোন প্রশ্ন থাকে না। কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আত্মহত্যা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন রয়েছে। এপর্যন্ত ১৯ জন ব্যাক্তি আত্মহত্যা করেছে। তাদের তালিকা সেসব দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া হয়েছে। এজন্য আমরা পোস্টমর্টেম রির্পোট পুনরায় পরীক্ষা করা ও সেটা আমাদের দেশের রির্পোট গ্রহণ করতে হবে, এধরনের একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের জনবল নিয়োগের জন্য অর্থমন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া আছে। এর পাশাপাশি আমরা লোকালদের নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছি। সচিব সেলিম রেজা বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রবাস কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্চে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস।
এ দিবস উপলক্ষ্যে আগামী ১৯শে ডিসেম্বর দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কর্মসুচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যবরিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ এবং ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের বাংলাদেশ মিশনেন প্রধান গর্গিও গিগাউরি।
এতে ১৪ টি দেশের ৪২ জন অনাবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সম্মাননা দেয়া হবে। বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রবর্তিত জীবন বিমা কর্মসূচির উদ্বোধন, প্রবাসী কর্মীদের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, অভববাসন মেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। আশারকরা যাচ্ছে ব্যাপক গণসচেতনা সুষ্টিসহ সুষ্টু নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার যাবতীয় কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ উপলক্ষে আগামীকাল সকার ৮ টায় মানিক মিয়া এভিন্যুয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।