
এবিএনএ : দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ডিভিশন বা প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদা না দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাইল বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার চার দিন পর সোমবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এই দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে বিএনপি ছাড়াও ২০ দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। একই রকম কর্মসূচি পালিত হয়েছে জেলা শহরগুলোতেও। রাজধানীতে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলেও আজ এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে অনেকটা নির্বিঘ্নে।
গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার আদেশের পর বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা তাকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার আবেদন করেননি। আর মহা কারা পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানিয়েছেন, কারাবিধিতে সরাসরি ডিভিশন পাওয়ার কথা বলা আছে রাষ্ট্রপতি এবং বর্তমান সংসদ সদস্যদেরকে। অন্যদেরকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ দরকার।
রবিবার বিএনপির আইনজীবীদের নির্দেশের পর খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। আর সন্ধ্যায় সেই ডিভিশন দেয়া হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডিভিশন না দিয়ে, এই অন্যায় করে তাকে (খালেদা জিয়া) যে কষ্ট দেয়া হয়েছে, আমরা এর বিচার চাই।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের নেত্রীকে কারাগারে নেয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক এমপি হিসেবে সরাসরি ডিভিশন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সরকার ডিভিশন না দিয়ে অর্ডিনারি একজন কয়েদি হিসেবে তাঁকে কষ্ট দিয়েছে।’ ‘গতকাল (রবিবার) কোর্ট থেকে আদেশ হয়েছে খালেদা জিয়াকে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন দেয়ার জন্য। কিন্তু জেল গেট থেকেই তাকে ডিভিশন দেয়া উচিত ছিল।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনও বলেন, ‘বেগম জিয়ার প্রথম দিন থেকেই ডিভিশন দেয়া উচিত ছিল। তাকে ডিভিশন না দিয়ে যে কষ্ট দেয়া হয়েছে আমরা এর বিচার চাই।’
‘আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ’
কর্মসূচিতে বেগম খালেদা জিয়াকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্ত করার ঘোষণা দেন বিএনপি নেতারা। তাদের দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রায় জনগণ গ্রহণ করেনি। আর জনতার চাপে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।
খালেদা জিয়ার দণ্ড হলে দেশে তুমুল আন্দোলনের হুমকি দেয়া বিএনপি অবশ্য রায়ের পর থেকে কর্মসূচি দিয়েছে নমনীয়। শুক্রবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ আর শনিবার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। আর শনিবার তিন দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হয়; যার মধ্যে আজকের মানববন্ধন ছাড়াও আছে মঙ্গলবারের অবস্থান এবং বুধবারের অনশন কর্মসূচি। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই ‘হঠকারী’ কর্মসূচি দিতে নিষেধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বলেছেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার জন্য, আমরা শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি। কিন্তু সরকার এখনো নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। তার তীব্র নিন্দা জানাই।’ ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। যতদিন খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়া হবে, ততদিন আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে আমাদের আন্দোলন দমানো যাবে না।’
খালেদাকে নিয়েই নির্বাচনে যাবে বিএনপি
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণাও দেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নির্দলীয় সরকার কায়েম করেই নির্বাচনে যাব।’
‘সরকার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখার দূরভিসন্ধি থেকে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়েছে।’ খালেদা জিয়ার সারা সরকারের প্রতিহিংসা থেকে দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘এটা সঠিক হয়নি। এই রায় এদেশের জনগণ গ্রহণ করেনি, অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’ ‘খালেদা জিয়ার নামে যে মামলা হয়েছে তা মিথ্যা বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই মামলায় খালেদা জিয়ার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোন সন্তোষজনক প্রমাণ দেখাতে পারে নাই রাষ্ট্রপক্ষ।’ মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, শামছুজ্জামান দুদু, রুহুল আলম চৌধুরী, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
Share this content: