আমেরিকালিড নিউজ

বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের

এবিএনএ : যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা ও বর্ণবাদের অবসানের দাবিতে চলা বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার টানা অষ্টম দিনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও কোথাও সেনাবাহিনীর ন্যাশনাল গার্ড ও পুলিশের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে হাঁটু গেড়ে সংহতি প্রকাশ করেন। দিনে বেশিরভাগ বিক্ষোভ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকলেও সন্ধ্যায় কারফিউ শুরুর পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ইপসোসের একটি যৌথ জরিপ মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৬৪ শতাংশ মানুষ চলমান বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছে এবং তারা মনে করেন আন্দোলন সঠিক পথে রয়েছে। তবে ২৭ শতাংশ মানুষ পুলিশি নিপীড়নের বিরুদ্ধে ও বর্ণবাদাদের অবসানের দাবিতে চলা বিক্ষোভে সমর্থন দেয়নি। ৯ শতাংশ মানুষ মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিল। স্থানীয় সময় সোম ও মঙ্গলবার জরিপ কার্যক্রমটি চালানো হয়।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে উপায়ে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন তাতেও যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ মানুষের সমর্থন নেই। ৫৫ শতাংশ মানুষ মনে করে ট্রাম্প সঠিক পথে নেই। তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জোরালোভাবে ট্রাম্পের পদক্ষেপের নিন্দা করেছে। তবে ৩৯ শতাংশ মানুষ প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট।

সোমবার বিক্ষোভ দমনে সেনা অভিযানের হুমকি দেন ট্রাম্প। তার এ ঘোষণা নিজ দেশে তো বটেই, মিত্র দেশগুলোতেও সমালোচিত হয়েছে। এ ছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির একটি ঘাঁটিতে এরই মধ্যে এক হাজার ৬০০ অতিরিক্ত সেনাকে যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার এ কাজের তত্ত্বাবধান করছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এ পদক্ষেপকে ‘চলমান বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তার দূরদর্শী পরিকল্পনার অংশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লস অ্যাঞ্জেলস, ফিলাডেলফিয়া, আটলান্টা ও সিয়াটলে হাজার হাজার মানুষ মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন শহরে কারফিউ শুরু হলেও আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে এবং বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটতে থাকে। সিয়াটলে ৬ জুন পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টির বেশি শহরে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি রয়েছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটলান্টায় রাতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে টিয়ার শেল ছুঁড়েছে পুলিশ। ওয়াশিংটনে কারফিউ শুরুর পরও শত শত মানুষ রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিল। এক পর্যায়ে তাদের সরিয়ে দিতে পিপার স্প্রে ব্যবহার করে ন্যাশনাল গার্ড।

নিউইয়র্কে রাতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। ২০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগের দিন সোমবার একদিনেই নিউইয়র্ক থেকে ৭০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছিল পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে সপ্তাহজুড়ে রাত্রিকালীন কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়িয়েছে নিউইয়র্ক শহর কর্তৃপক্ষ।

উইসকনসিন রাজ্যের মিলওয়াকিতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলসের মেয়রের বাড়ির সামনে দিনভর বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়ে ছিলেন। তবে সন্ধ্যার পর কারফিউ শুরু হলে পুলিশ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার শুরু করে।মিনিয়াপোলিসে গত ২৫ মে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি পুলিশের হাতে খুন হওয়ার পর থেকে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button