জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

বাংলাদেশ নৌবাহিনী হবে সামরিক নৌযানের বাণিজ্যিক নির্মাতা

এবিএনএ : বাংলাদেশ নৌবাহিনী পর্যায়ক্রমে সামরিক নৌযানের বাণিজ্যিক নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমিতে রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট, দুটি লার্জ পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণের মাধ্যমে দেশে যুদ্ধজাহাজ তৈরির ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। সেখানে আরও পাঁচটি পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণকাজ চলমান।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড ছয়টি আধুনিক সরঞ্জাম সজ্জিত বড় আকারের ফ্রিগেট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নৌবাহিনী তিন বাহিনীর জন্য আইএফএফ সিস্টেম প্রস্তুত করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী সামরিক নৌযানের বাণিজ্যিক নির্মাণ কার্যক্রমের ফলে দেশীয় প্রযুক্তি বিকাশ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।’

নৌবাহিনীর উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌবাহিনীকে যুগোপযোগী বাহিনী তৈরি করতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ২০০৯ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ হাতে নেই। এরই ধারাবাহিকতায় নৌবাহিনীতে ২৭টি যুদ্ধজাহাজ সংযুক্ত করেছি। নৌবাহিনীর এভিয়েশন উইং সৃষ্টি করেছি। ২০০৯ সালে অত্যাধুনিক সাবমেরিন যুক্ত করি। ফলে এই বাহিনী উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছে।’

নৌবাহিনীকে আধুনিক করতে বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় দুটি পেট্রোল ক্রাফট নিয়ে নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু নৌঘাঁটিগুলোকে কমিশন প্রদান করেন। এছাড়া বন্দর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেসব মাইন পুঁতে রেখেছিল সেগুলো অপসারণ করে ব্যবহার উপযোগী করেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে চালু করা হয়েছে উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের সুবিশাল বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে মিসাইল, আরএফএফ সিস্টেম ইত্যাদিসহ আধুনিক যুদ্ধ প্রযুক্তি সংযোজনের কাজও চলমান। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ ঘাঁটি ‘বানৌজা শেরে-ই-বাংলা’ ও ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ ঘাঁটির কাজ ধ্রুত এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আমাদের বিশাল সম্পদের উৎস। ১৯৯৬ সালে আমরা সমুদ্রসীমা অর্জনের পদক্ষেপ নেই। ২০০৯ সালে আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হই। সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ থাকতে হবে।

নৌবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমুদ্র অপার সম্পদের উৎস। মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসার ফলে সমুদ্রের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। মৎস্য ও খনিজ সম্পদে ভরপুর আমাদের জলসীমার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আপনাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও এর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সদস্যরা সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করেন। জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে ভবিষ্যতেও সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশের প্রয়োজনে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। সেই মহান প্রত্যয়ের আলোকেই বর্তমান নৌবাহিনীকে আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজগুলোর অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এর আগে নৌবাহিনীর শীতকালীন কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৬১ জন মিডশিপ ম্যান এবং ১১ জন ডাইরেক্ট অ্যান্ট্রি অফিসারসহ ৭২ জন নবীন অফিসার কমিশন লাভ করেছেন। তাদের মধ্যে ৭ জন নারী এবং ২ জন মালদ্বীপের কর্মকর্তা রয়েছেন।

সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে রাইয়ান রহমান চৌকস মিডশিপ ম্যান হিসাবে সোর্ড অব অনার, সাইদিস সাকলাইন নৌপ্রধান স্বর্ণপদক এবং সাব লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া, এম এ লতিফ, ওয়াসিকা আয়শা খান, মোস্তাফিজুর রহমান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, নৌ সদর দফতরের পিএসওগণ, সেনা নৌ ও বিমান বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়কগণ, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং শিক্ষা সমাপনী ব্যাচের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

Share this content:

Related Articles

Back to top button