
এবিএনএ : দুর্নীতি মামলার দণ্ডিত হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার পেছনে সরকারের হাত দেখছেন এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। এর পরিণতি শুভ হবে না বলে তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শনিবার সকালে রাজধানীর এফডিসি সংলগ্ন দলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এলডিপি। কর্নেল অলি আহমদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। দীর্ঘ সময় তিনি বিএনপি করেছেন। ছিলেন মন্ত্রীও। আভ্যন্তরীণ বিরোধে জড়িয়ে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এলডিপি নামে নতুন দল। পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে যোগ দেয় এলডিপি। অলি বলেন, ‘আমাদেরকে ধ্বংসাত্মক কোনো কাজের দিকে ধাবিত না করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখার প্রতিবাদে জনগণ অবশ্যই রাস্তায় নামবে। সরকারকে এর পরিণতি বুঝতে হবে।’
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির ডাকা সব প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানান এলডিপির এই প্রতিষ্ঠাতা। বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সাবেক সেনাপ্রধানের সহধর্মিনীকে অন্যায়ভাবে জেলে বন্দী রাখার পরিণতি শুভ হবে না। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রতি এধরনের আচরণ জনগণের কাছে অপ্রত্যাশিত বলে তিনি মনে করেন। বলেন, ‘একজন সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, কয়েকবারের বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং বিএনপির চেয়াপারসনের বিরুদ্ধে এমন রায়ে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ অনেক দেশ উদ্বেগ জানিয়েছে।’ ওই দেগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে গোটা জাতিকে এই রায়ে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান সাবেক এই বিএনপি নেতা। যে মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে এর সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে দাবি করেন এলডিপির সভাপতি। বলেন, এখানে তিনি কোনো অর্থ তসরুফ করেননি। হয়তো কিছু নিয়মে ভুল ছিল, এর বাইরে কিছু না। অলি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার এই রায় সরকারের পূর্বপরিকল্পিত। নয়তো আকস্মিকভাবে রায়ের ১৫ দিন আগে কেন নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগার সংস্কার করা হবে? বৃহস্পতিবার কেন রায় দেয়া হবে? ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় কীভাবে ১০ দিনের ভেতর লেখা সম্ভব হবে?’ বৃহস্পতিবার রায় দেয়ার পেছনে কারণ হিসেবে শুক্রবার ও শনিবার বেগম জিয়াকে পরিত্যক্ত জেলে রাখার পূর্ব পরিকল্পনা হিসেবে দেখছেন তিনি।
‘এই রায়ে এরশাদ জড়িত’
বেগম জিয়ার এই রায়ের সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জড়িত বলে মনে করেন অলি আহমদ। তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়াকে কেন সেখানে রাখা হলো? তাকে তো কাশিমপুর বা কেরানীগঞ্জে নির্মিত নতুন কারাগারেও রাখা যেতো। তিনিও (এরশাদ) নাজিম উদ্দিন রোডের জেলে এক সময় বন্দী ছিলেন। তাকে খুশি করতেই খালেদা জিয়াকে এখানে রাখা হয়েছে।’বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধামন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসেবে ডিভিশন চেয়ে আবেদন করার বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, এটা তো ওনার এমনিতেই পাওয়ার কথা। রবিবার কোর্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গে হাইকোর্টে আপিল করে খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের পরামর্শ দেন ২০ দলীয় জোটের এই শীর্ষ নেতা। একই সঙ্গে ন্যায়বিচার করে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে বিচারপতিদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। খালেদা জিয়ার রায়ের পর আন্দোলন তেমন নেই, এটি কি আপনাদের নমনীয়তা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অলি আহমদ বলেন, ‘আমরা একদমই নমনীয় না। খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি সাবেক সেনাপ্রধানের একজন স্ত্রী। সরকারের এধরনের কর্মকাণ্ডে দেশের সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।’ খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে পড়বে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কারো অনুপস্থিতি কোনো দল থেমে থকে না। একজন গেলে আরেকজন তার জায়গা নেয়।’
Share this content: