হংকং বিক্ষোভের ‘নিউক্লিয়াস’ কে এই তরুণ?

এবিএনএ : বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে হংকংজুড়ে প্রবল বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে জনতা। প্রবল এই বিক্ষোভের ‘নিউক্লিয়াস’ জোশুয়া ওং নামের ২২ বছর বয়সী এক ছাত্র। গতকাল সোমবার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল অনুসারে, হংকংয়ের অপরাধীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণ করার বিধান রয়েছে।
হংকংয়ের বিক্ষোভকারী জনতা বেইজিংপন্থী নেতা ক্যারি লামের পদত্যাগ দাবি করেছেন। এদিকে লাম শনিবারই ওই বিল স্থগিত করেছেন এবং এই বিল বিতর্ক জন্ম দেয়ায় ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু বিক্ষোভ নিরসনে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। হংকংয়ের প্রবল বিক্ষোভের একজন কেন্দ্রীয় আন্দোলনকারী জোশুয়া ওং। কারাগার থেকে বের হওয়ার পরই তিনি জানিয়েছেন, বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে তিনিও যোগ দিতে যাচ্ছেন।
গণতন্ত্রপন্থীরা হংকংয়ে ২০১৪ সালে আন্দোলন করে। এই আন্দোলন ‘আমব্রেলা মুভমেন্ট’ হিসেবে পরিচিতি পায়। সেই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে উঠেছিলেন জোশুয়া ওং। তিনি এবং অন্য ছাত্রনেতারা সেই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। তখন ৭৯ দিন ধরে হাজার হাজার মানুষ হংকং’র কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক সড়কে ক্যাম্প অবস্থান করে। এর ফলে শহরটি স্থবির হয়ে পড়ে। ছাত্র বিক্ষোভকারীরা কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ব্যাপ্টিস্ট মন্ত্রীদের সাথে পরবর্তীতে বেআইনি সমাবেশের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে বন্দী হন। বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে ওং-কে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে দুটো আলাদা কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু দণ্ডাদেশের মেয়াদ কমিয়ে দেয়ার পর সোমবার (১৭ই জুন) তিনি মুক্তি পান।
সোমবার কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই ক্যারি লামের পদত্যাগের দাবি তুলেন ওং। তিনি বলেন, ক্যারি লামকে সরে যেতে হবে। হংকং এর নেতা হবার উপযুক্ত নন তিনি। আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হংকং’র প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম’র অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের ঢেউ ২০১৪ সালের আন্দোলনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ওং বলেছেন, আমি এই বিক্ষোভে যোগ দেবো। জোরালো কণ্ঠে আমাদের অসন্তুষ্টির কথা তুলে ধরার এটাই সময়। এই প্রত্যর্পণ আইনের সংশোধন হংকং’র মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকারকে দমন করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আমি নাগরিক অবাধ্যতা এবং যেকোনো ধরনের সরাসরি অ্যাকশন সমর্থন করি। সংবাদ মাধ্যমকে একান্ত সাক্ষাৎকারে ওং বলেন, আমাদের দাবি এই আইনের সাময়িক স্থগিতাদেশের পরিবর্তে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। আমরা যেটা করার চেষ্টা করছি সেটা হলো, নাগরিক আইন অমান্য করা এবং সরাসরি অ্যাকশনের মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্বকে বোঝানো যে হংকং এর মানুষ মুখ বুজে থাকবে না।
তিনি বলেন, পুলিশ যখন হংকং এ টিয়ার গ্যাস, পিপার স্প্রে ছোড়ে কিংবা কোন আন্দোলনকারীকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করে তখন তা একটি পরিষ্কার বার্তা দেয়। সরকার, শাসকগোষ্ঠী, সমগ্র একটি নাগরিক প্রজন্মকে সাধারণ বাসিন্দা থেকে বিদ্রোহী হিসেবে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদেরকে দাঙ্গাবাজ হিসেবে অভিহিত করায় তীব্র সমালোচনা করেছেন ওং।
তিনি বলেন,পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শারীরিকভাবে নিগৃহীত করেছে। ক্যারি লাম বিক্ষোভকে দাঙ্গা বলে দাবি করেছেন। আমরা তাকে ক্ষমা চাইতে আহ্বান করছি। গত কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ ছিল আইনের প্রতি নাগরিক অবাধ্যতা, দাঙ্গা নয়। শীঘ্রই বিশাল জনসমাগমের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস এখনো পর্যন্ত যে সমাবেশ হয়েছে তা সবচেয়ে বিশাল বলা যাবে না। ভবিষ্যতে দশ লাখেরও বেশি হংকং বাসিন্দা আবারো রাস্তায় নেমে আসবে। হংকং এর জন্য চূড়ান্ত সমাধান হচ্ছে, এখানকার বাসিন্দাদের নিজেদের নেতা স্বাধীনভাবে নির্বাচনের অধিকার তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত ১৮৪১ সাল থেকে ব্রিটিশ কলোনি ছিল হংকং। বর্তমানে হংকং ‘এক দেশ দুই পদ্ধতি’ নীতির অধীনে চীনের অংশ। হংকং এর বেশিরভাগ লোক জাতিগতভাবে চীনা বংশোদ্ভূত। চীনের মূল ভূ খণ্ডে নেই এমন স্বাধীনতা হংকং’র জনগণ এখনো উপভোগ করছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, তা হুমকির মুখে।
Share this content: