আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

লক্ষ্য অর্জনের জন্য সারল্য একটি শক্তি : ম্যাক্সিমা

এবিএনএ: শুধু ‘ম্যাক্সিমা’ নামেই বিশ্বজুড়ে পরিচিতি। পুরো নাম রানী ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা সেরুতি। জন্ম ১৯৭১ সালের ১৭ মে। জন্মেছেন আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স শহরে। মূল পেশা আইনজীবী। কাজ করছেন জাতিসংঘ দফতরে। গত ৯ জুলাই এসেছিলেন বাংলাদেশ সফরে। নেদারল্যান্ডের রানী ম্যাক্সিমার বাংলাদেশে এটিই প্রথম সফর নয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশটির রানী ম্যাক্সিমা। নর্থল্যান্ডস স্কুলে শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি। পন্টিফিক্যাল ক্যাথোলিক ইউনিভার্সিটি অব আর্জেন্টিনা থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক করেন। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

জীবনের শুরুতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সাফল্য পেয়েছেন। কাজ করেছেন এইচএসবিসি ব্যাংকে। উন্নয়নে স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গবেষণা করেছেন আর্থিক খাতের বিভিন্ন বিষয়ে। অর্থনীতির ওপর দারুণ দখল। ক্যারিয়ারের প্রতিটি ধাপেই আর্থিক খাত নিয়ে কাজ করেছেন সফলতার সঙ্গে। সাদা আর হাসিখুশি জীবনেই অভ্যস্ত। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজেই মিশে যাওয়ার দারুণ সক্ষমতা আছে তার। দূরদর্শী হিসেবেই জাতিসংঘ অধিদফতরে তিনি দারুণ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। বাবা জর্জ জরিগুয়েতা ছিলেন সরকারি সচিব। মা মারিয়া ডেল কারমেন। পরিবারে আছে দুই ভাই ও এক বোন। অভিজাত এবং রাজনৈতিক পারিবারিক আবহে বেড়ে উঠেছেন। শিক্ষাজীবনে সব স্তরেই রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর। ২০০১ সালে বিয়ে করেন উইলিয়াম আলেক্সজান্ডারকে।

বাংলাদেশ সফরে এসে আগারগাঁওস্থ আইডিবিতে ঢাকায় জাতিসংঘ সদরদফতর পরিদর্শন করেন। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এছাড়া নরসিংদীর পলাশে জিন্দারি ইউনিয়ন পরিষদ এবং টাঙ্গাইলে একটি বুটিক শপ ঘুরে দেখেন। জাতিসংঘের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থাপনার অগ্রগতি পরিদর্শনেই তিনি ঢাকা সফরে আসেন। নেদারল্যান্ডের জনগণের কাছে দারুণ জনপ্রিয় ম্যাক্সিমা। সদাই হাসিমুখে থাকেন। তবে নিজের কাছের প্রতি দারুণ কমিটেড তিনি।

বিশ্বের সাধারণ মানুষের আর্থিক উন্নয়ন কীভাবে আরও উন্নত করা যায় এ নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ছুটে বেড়াচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। নিজের দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গে জাতিসংঘের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন। বৈশ্বিক কূটনৈতিক পরিসরে প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা তাকে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তার এ গুণের কারণেই জাতিসংঘ তাকে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে দায়িত্ব দিয়েছে। ডাচ রানী বাংলাদেশের বেশ কিছু উন্নয়ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। অর্থনৈতিক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক করেন। এছাড়া বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গোলটেবিল আলোচনায় বসেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ সফরে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তৃণমূলের মানুষের সেবাপ্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে জানিয়ে রানী ম্যাক্সিমা বলেছেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে নারীদের আর্থিক খাতে সম্পৃক্ত করা জরুরি। বাংলাদেশের উত্তরোত্তর অগ্রগতির প্রশংসা করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষ আইনজীবী রানী ম্যাক্সিমা। বাংলাদেশ সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ পরিদর্শনে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে আলোচনায় নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা সুস্পষ্ট করেন।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত প্রসঙ্গে ম্যাক্সিমা বলেছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতে ৪৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। শুধু অনলাইনে বেতন পরিশোধ নয়, শ্রমিকরা যেন কেনাকাটা বা অন্যান্য লেনদেন অনলাইনে করতে পারে, সে ধরনের ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে উন্নয়নে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে জানান। রানী ম্যাক্সিমা মূলত জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক বিশেষ পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশ্বে এখন আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণে বড় বড় অগ্রগতি হচ্ছে। তবে আর্থিক সেবা পেতে এখনও জেন্ডার বৈষম্য রয়ে গেছে। সারা বিশ্বে পুরুষদের তুলনায় নারীরা ডিজিটাল আর্থিক সেবা বা ব্যাংকিং সেবা পাওয়ার বিবেচনায় এখনও যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। এমন বৈষম্য কমিয়ে আনতে আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা আরও কীভাবে ডিজিটালাইজড করা যায় এ নিয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। নারী-পুরুষের অর্থনৈতিক সমতা অর্জন না হওয়া অবধি কাজ করে যেতে হবে জানান রানী ম্যাক্সিমা।

আড়াই বছর পর দ্বিতীয়বার বাংলাদেশে এসে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির উন্নতি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট’ (ইউএনএসজিএসএ) বিশেষ দূত রানী ম্যাক্সিমা। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবার অংশগ্রহণ ৩১ শতাংশ থাকলেও ২০১৭ সালে তা ৫০ শতাংশে যায়। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক। এটা সম্ভব হয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিকসেবার মতো খুবই মৌলিক একটি সেবার কারণে।

বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ পুরুষের ব্যাংক হিসাব আছে। আর নারীর ব্যাংক হিসাব মাত্র ৩৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে ২০১৪ সালের তুলনায় অর্থনীতিতে লিঙ্গবৈষম্য বেড়েছে ২০ শতাংশ। মূলত রানী ম্যাক্সিমার দ্বিতীয় সফর বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সেবায় নারীর প্রবেশাধিকার এবং নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তার প্রতি প্রতিশ্রুতিস্বরূপ। ২০০৯ সালে রানী ম্যাক্সিমা ইউএনএসজিএসএ হিসেবে নিযুক্ত হন। পদাধিকারবলে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তাছাড়া বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সবার জন্য নিরাপদে ও সুলভে সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিতে কাজ করে থাকেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা তার কাজে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। নিজের জীবনে কঠিন সব লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছেন। তবে কাজ করে গেছেন লক্ষ্য নিয়ে। মনোযোগ দিয়ে একাগ্র হয়ে কাজ করলে সাফল্য এমনিতেই ধরা দেয়। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার মধ্যে সুখানন্দ আছে। তা অর্জন করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সাফল্য লুকায়িত। উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সারল্য আর সহজবোধ্যতা জীবনকে অনেক বেশি উপভোগ্য করে তোলে। নিজের লক্ষ্যের সঙ্গে আনন্দ জুড়ে দিতে পারলে তা অসম্ভব কিছু অর্জনে দারুণ সহায়ক হয়। এসব বিশ্বাস নিয়েই তাবৎ বিশ্বের আর্থিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন রানী ম্যাক্সিমা।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button