এ বি এন এ : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা উপমহাদেশের সংস্কৃতি। পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে প্রচুর সহিংসতা হয়েছে। বিদেশে কিন্তু আমরা এসব দেখি না। সেখানে নির্বাচন কেন্দ্র দেখিয়ে দিতে হয়তো একজন ট্রাফিক পুলিশ আছে। আর্মস (অস্ত্রধারী) পুলিশ ব্যাটালিয়ন থাকে না। আমাদের তো মনে হচ্ছে যে নির্বাচন করার জন্য ট্যাংক বানানো লাগবে!’
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে রুদ্ধদার বৈঠক করেন তিনি। পরবর্তী ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে বৈঠকটির আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। বৈঠকের আগে ও পরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের পরবর্তী ধাপে রাতে ভোটকেন্দ্র দখলের মতো বিশ্রী ব্যাপার কমে এসেছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপে একটিও হয়নি। চতুর্থ ধাপে আবার দু-একটি ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য শুনে আশাবাদী যে আগের চেয়েও সামনের নির্বাচন আরও ভালো ও সুষ্ঠুভাবে করতে পারব।’
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, আজকের দিনে বাংলাদেশের মিডিয়া (গণমাধ্যম) অত্যন্ত সফল এবং আপনাদের উপস্থিতি সব জায়গায় আছে। আপনারা নির্বাচনের দিন সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আপনারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরের ছবি, লাইনের ছবি, গণনার ছবি দেশবাসীকে দেখান। এতে প্রতিটি জায়গায় সুষ্ঠু লাইনে বৃদ্ধ, নারীসহ সর্বস্তরের ভোটার যে ভোট দিচ্ছেন, সেই দৃশ্য আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী দেখতে পায়। অবশ্য বেশ কিছু কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল ও বেআইনি কাজ যে ঘটেছে, সেগুলোও আপনারা দেখিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘এই দু-চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বারবার দেখানোর কারণে সবার মনে ধারণা হয় যে সব জায়গাতে খারাপ নির্বাচন হচ্ছে। আসলে আপনাদের ভিডিওগুলো যদি নিরপেক্ষভাবে দেখেন, তাহলে উত্তরাটা আপনারা পেয়ে যাবেন। আমি আশা করি, দেশবাসীও তা বুঝতে পেরেছে।’
সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের আগের রাতে কিংবা নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র দখলের ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। যদিও আগের নির্বাচনে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে, সেদিকে আমরা সচেষ্ট।’
স্থানীয় নির্বাচনে অতীতেও প্রচুর সংঘাত হয়েছে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসলে পরিসংখ্যান দিয়ে এসব পরিমাপ করা যায় না। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে এক ভোটের এদিক-ওদিক হলে লোকে আরেকজনের মাথায় বাড়ি মারতে চায়। আমাদের দেশে অসহিষ্ণুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আমরা কেউ কারও কথা শুনতে চাই না। আমি যদি না জিতি খারাপ হয়ে যাবে। তাহলে আমি লাঠি নিয়ে আসছি।’
এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, লোকের মাথায় লাঠি মেরে নয়। যাঁরা প্রতিযোগিতা করছেন, তাঁদের উচিত জনগণের রায়কে শ্রদ্ধা করা।
আজকের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, নগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার, জেলা পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার, র্যাব, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) আলোচনায় অংশ নেন।