এবিএনএ: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের জন্য রাজধানী ঢাকার রাজপথের বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরমে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। রাজধানীজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, নতুনবাজার, কুড়িল বিশ্বরোপ, মিরপুর-১০ ও উত্তরায় অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বাড্ডায় কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবুও রাজপথ ছাড়েনি শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া মিরপুর-১০-এর গোলস্তরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
সকাল ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সংঘর্ষের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে। যানবাহন না পেয়ে সাধারণ মানুষ ও অফিসগামী পথচারীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর ফলে মেরুল বাড্ডা এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের জন্য সকালে কয়েকশ শিক্ষার্থী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। এ সময় মেরুল বাড্ডা এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সব যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে রাস্তায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দেন।
একপর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিলে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে। পরে তারা একত্রিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে তেড়ে এসে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষ বন্ধ হলেও ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন কিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তা জানা যায়নি। তবে ছাত্রদের হামলায় এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
উত্তরাতেও কোটা সংস্কারের দাবিতে সড়কে নেমেছে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
জানা যায়, উত্তরা জমজম টাওয়ারের সামনে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দফায় দফায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশ বক্স ও দুটি যাত্রীবাহী বাসে ভাঙচুর চালায়। সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ডিউটি অফিসার এসআই রিপন বলেন, এখনো সংঘর্ষ চলছে। ভাঙচুরের ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়নি। পুলিশ সদস্যরা সেখানে কাজ করছেন।
বেলা ১১টার পর রামপুরাতে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২ ও ৩ নম্বর গেটের সামনের সড়কে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।
এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এর পর থেকেই সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। ঢাবি ছাড়াও বিক্ষোভ হয় জাবি, জবি, রাবি, সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজে।