
এবিএনএ : ব্রাজিলের মাটিতে ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছরের শিরোপা-খরা কাটালো আর্জেন্টিনা। রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানায় সেলেসাওদের ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন এখন আর্জেন্টিনা। ১৯৯৩ সালের পর প্রথম আন্তর্জাতিক কোন ট্রফি জিতল আর্জেন্টিনা। সেই সঙ্গে আক্ষেপ ঘুচলো লিওনেল মেসিরও। ক্যারিয়ারের একমাত্র আক্ষেপ ছিল দেশের হয়ে একটি ট্রফি- সেটাও হয়ে গেলো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে। মারাকানায় ব্রাজিল সবশেষ ম্যাচ হারে ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে। সেই ম্যাচটি এখনও ‘মারাকানা ট্র্যাজেডি’ নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে কোপার ফাইনাল ম্যাচে ২২ মিনিটে ব্রাজিলের জালে বল পাঠিয়ে দেন ডি মারিয়া। সেই গোল আর শোধ করতে পারেনি ব্রাজিল। তবে সেমিফাইনালের মতো এবারো আর্জেন্টিনাকে গোল থেকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ। এদিন মারাকানায় ফাইনাল ম্যাচ শুরু না হতেই ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ব্রাজিলের ফ্রেড। সাইডলাইনে মন্টিলকে ফাউল করায় ফ্রেড এই শাস্তি পান। ২২ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ডি মারিয়ার গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। রদ্রিগো দি পলের লম্বা করে বাড়ানো পাস থেকে বলটি পান ডি মারিয়া। ডান প্রান্ত থেকে ছুটে গিয়ে ব্রাজিলের গোলরক্ষক মোরায়েসের মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন তিনি। ২০০৪ সালে সিজার দেলগাদোর পর ডি মারিয়া প্রথম আর্জেন্টাইন ফুটবলার যিনি কোপার ফাইনালে গোল করলেন।
ম্যাচের ৩৩ মিনিটে নেইমারকে ফাউল করার জন্য হলুদ কার্ড দেখেন পারেদেস। ৩৪ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রি-কিক পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ব্রাজিল। ৪৪ মিনিটে নেইমারের কর্নার থেকে আক্রমণ চালান রিচার্লিসন, তবে তা মাঠের বাইরে চলে যায়।প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনা। আক্রমণ ও বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও ব্রাজিল ছিল অনেকটাই যেন ছন্নছাড়া। প্রথমার্ধের ৫৪ শতাংশ সময় বল ছিল নেইমারদের পায়ে। গোলমুখে ৬টি শটও তারা নেয়, কিন্তু একটি সফল হয়নি। অন্যদিকে ব্রাজিলের গোলমুখে ৩টি শটের মধ্যে ১টি গোল পায় আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই একের পর এক জোরালো আক্রমণ করতে থাকে ব্রাজিল, যার সুবাদে ম্যাচের ৫২ মিনিটেই পেয়ে যায় গোলের দুর্দান্ত একটি সুযোগ। ডি-বক্সের মধ্য থেকে সেটি কাজেও লাগান রিচার্লিসন। কিন্তু আক্রমণের শুরুতে তিনি অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় সেই গোল। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে মার্টিনিজের দারুণ নৈপুণ্যে রক্ষা পায় আর্জেন্টিনা। ডান দিক থেকে নেইমারের বাড়ানো বলে শট নিয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু মার্টিনেজকে ফাঁকি দিতে পারেনি বল। ৩ মিনিট পরে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের আরও একটি আক্রমণ প্রতিহত করেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক।
৭৯তম মিনিটে একসঙ্গে তিনজন বদলি ফুটবলার মাঠে নামায় আর্জেন্টিনা। রোমেরো, ডি মারিয়া ও মার্টিনেসকে তুলে নিয়ে তারা মাঠে নামায় পেজেল্লা, পালাসিয়স ও গঞ্জালেসকে। ৭৬ মিনিটে রেনান লোদি ও পাকুয়েতাকে তুলে নিয়ে ব্রাজিল মাঠে নামায় এমারসন ও বারবোসাকে। ৮৫ মিনিটের মাথায় নেইমারের কর্নার কিক থেকে হেডে আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করেন থিয়াগো সিলভা। কিন্তু বল চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। ৮৯ মিনিটের মাথায় গোলের সহজ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৬ গজ দূরত্ব থেকে ব্রাজিলের গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেই আর্জেন্টিনা লিড বাড়িয়ে নিতে পারত। অবশ্য শেষ পর্যন্ত এ জন্য কোনো মূল্য দিতে হয়নি আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে। অবশেষে জাতীয় দলের জার্সিতে নিজের প্রথম শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়ে গেছেন আধুনিক ফুটবলের অন্যতম সেরা ফুটবলার মেসি।
সবশেষ ১৯৮৬ দিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকাও জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা। এরপর আর্জেন্টিনা আর কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি। তবে ২০০৪, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা ও ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ট্রফি নিজেদের করতে পারেননি মেসি। এবার আর ভুল করলেন না তারা, ব্রাজিল থেকেই ট্রফি নিয়ে ফিরলেন দেশে। সেই সঙ্গে কোপায় সবচেয়ে বেশি (১৫টি) শিরোপা জেতার রেকর্ডে উরুগুয়ের সঙ্গী হলো আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনাকে দীর্ঘ ২৮ বছর পর চ্যাম্পিয়ন করার পথে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেসি। পুরো আসরে ৪ গোল ও ৫ এসিস্ট করে দলকে পাইয়েছেন শিরোপা। ফাইনাল ম্যাচে গোল-এসিস্ট না পেলেও পুরো ম্যাচেই জয়ের জন্য মরিয়া ছিলেন মেসি।
Share this content: