এবিএনএ: এবার সৌদি আরব মাতিয়েছেন মার্কিন সংগীত তারকা মারিয়া কেরি। তার সুরের ঝংকার কিং আবদুল্লাহ ইকোনমিক সিটিতে বিরল এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে। মুসলিমদের পবিত্র নগরী মক্কা থেকে এই সিটির দূরত্ব মাত্র দুই ঘণ্টার পথ। এখন সৌদি আরবে কনসার্ট নতুন কোনো আশ্চর্যজনক ঘটনা নয়। গত বছরে সৌদি কর্তৃপক্ষ উন্মুক্ত কনসার্ট ও এতে নারী-পুরুষের অবাধ অংশগ্রহণের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এরপর থেকে দেশটিতে দফায় দফায় কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কখনো সরকার এতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, আবার কখনো ধনকুবেররা ব্যক্তিগত উদ্যোগে গান-বাজনার আয়োজন করেছেন। তবে মারিয়া কেরির মতো প্রথম সারির গায়িকার অংশগ্রহণ এই প্রথম। শুক্রবারের কনসার্টে কালো রংয়ের আকর্ষণীয় পোশাক পরে ভক্তদের হৃদয়ে ঢেউ তোলেন তিনি।
গত ডিসেম্বরে স্প্যানিশ সংগীত তারকা এনরিক ইগলেসিয়াস, ফরাসি ডিজে ডেভিড গুয়েতা ও মার্কিন ব্যান্ডদল দ্য ব্ল্যাক আইড পিয়াস সৌদি আরবে পারফর্ম করেন। সৌদি আরবের মতো রক্ষণশীল দেশে পশ্চিমা তারকাদের অংশগ্রহণে এমন উন্মুক্ত কনসার্ট আয়োজন সম্ভব হয়েছে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেয়া ব্যাপক সংস্কারমূলক পদক্ষেপের কল্যাণে। যদিও অধিকার কর্মীরা সৌদি আরবের কনসার্টে মারিয়া কেরির অংশগ্রহণের সমালোচনা করেছেন। তাদের দাবি, সৌদি আরবে অধিকারকর্মীসহ সাধারণ মানুষ ব্যাপক নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন, জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন। সরকারের ছত্রছায়ায় ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া, ইয়েমেনে সৌদি সরকারের অব্যাহত হামলা প্রমাণ করে যে, রিয়াদ মানবাধিকার রক্ষায় তেমন আগ্রহী না। এর প্রতিবাদে মারিয়া কনসার্টে অংশগ্রহণ না করলেও পারতেন। অনেকে বলছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৌদি আরবের ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি আড়াল করার জন্যই এসব জাঁকজমকপূর্ণ কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে। অথচ এই উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যেও সরকার দেশে দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অধিকার সংগঠনগুলো সৌদি কনসার্টে অংশ নেয়ার জন্য মারিয়া কেরির সমালোচনা করেছেন। অধিকারকর্মীরা মনে করেন, মারিয়ার উচিত ছিল কনসার্টের মঞ্চে সৌদি আরবে আটক নারী অধিকার কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো। নারী অধিকারের দাবিতে ও পুরুষের কর্তৃত্বের প্রতিবাদে আন্দোলন করার দায়ে জেলে বন্দি রয়েছেন লুজাইন নামের এক অধিকার কর্মী। কনসার্টের মঞ্চে এই অধিকারকর্মীর মুক্তির দাবি তোলার জন্য মারিয়া কেরির প্রতি অনুরোধ করেছিলেন তার সহোদর ওয়ালিদ আল হাথলুল। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি।
রাজনৈতিক শরণার্থী হয়ে সৌদি আরব ত্যাগ করা ওমাইমা আল নাজ্জারও এই কনসার্টকে দেশে ও বিদেশে সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। কনসার্ট বর্জন করার জন্য মারিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি পিটিশনও চালু করেন তিনি। তবে মারিয়া কেরির তরফ থেকে বলা হয়েছে, তাকে সৌদি আরবে একটি আন্তর্জাতিক কনসার্টে পারফর্ম করার প্রস্তাব দেয়া হয়। বলা হয়, এতে নারী-পুরুষ সবাই অংশ নেবে। লিঙ্গ বৈষম্য রোধে এই কনসার্টকে ইতিবাচক বিবেচনা করে মারিয়া কেরি এই প্রস্তাবে সম্মত হন।
Like this:
Like Loading...