এবিএনএ : ইউএসএআইডির কর্মী জুলহাজ মান্নান খুনের নিন্দা জানিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, জুলহাজ ছিলেন ‘একজন আস্থাভাজন সহকর্মী, একজন প্রিয়তম বন্ধু এবং বাংলাদেশে ব্যক্তির মর্যাদা ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার’।
কেরির মতে, জুলহাজের হৃদয়ে ছিল বাংলাদেশের চেতনা এবং সহনশীলতা, শান্তি ও বৈচিত্র্যের সুরক্ষায় বাঙালির যে ঐতিহ্য তার প্রতিনিধি ছিলেন তিনি।
হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারকে ‘পূর্ণ সহযোগিতার’ প্রস্তাব দিয়েছেন জন কেরি।
সোমবার বিকালে কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকায় পার্সেল দেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে খুন করা হয় ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা জুলহাজ (৩৫) ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে (২৬)।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল অ্যাসিসটেন্ট জুলহাজ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাত ভাই। তিনি সমকামীদের অধিকার পক্ষের সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন।
বিবৃতিতে জন কেরি বলেন, “যে বিষয়গুলো জুলহাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেগুলোর প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বে সহনশীলতা ও মানবাধিকারের জন্য যারা কাজ করছেন তাদের সবাইকে সহযোগিতার অঙ্গীকার রয়েছে আমাদের।”
এদিকে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, তদন্তের আগে কী উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড তা নিয়ে কোনো ধারণা করতে চান না তারা।
“তিনি (জুলহাজ) ছিলেন সমকামী অধিকারের একজন সাহসী মুখপাত্র, যা মানবাধিকার এবং তার এ হত্যাকাণ্ড বর্ণনাতীত, অগ্রহণযোগ্য ও ক্ষমার অযোগ্য।”
বাংলাদেশে মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, শিক্ষক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ শিকার জুলহাজ মান্নান।
এখন পর্যন্ত কেউ তার হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার না করলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইএসের নামে এ ধরনের অধিকাংশ ঘটনার দায় স্বীকারের বার্তা এসেছে। এই দাবি খারিজ করে বাংলাদেশ সরকার বলে আসছে, বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই জঙ্গি গোষ্ঠীর কোনো অস্তিত্ব নেই।
তবে এসব হত্যাকাণ্ডের পিছনে কারা তা বের করতে পারেনি সরকার।
লেখালেখি ও মত প্রকাশের জন্য যারা ‘আসন্ন বিপদের মুখে’ তাদের আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
সোমবারের প্রেস ব্রিফিংয়েও তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় থাকার কথা জানান পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র।
‘প্রয়োজন অনুসারে ঘটনা ধরে ধরে’ বিষয়টি পররাষ্ট্র দপ্তর বিবেচনায় নিবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘সজাগ’ রয়েছে।
“আমি আগে যা বলেছি আবারও তা বলছি, বাংলাদেশের এগিয়ে চলার যে ইতিহাস তার সঙ্গে এটা (সহিংসতা) পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।”
তিনি বলেন, “একটি উদারপন্থি, সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ এবং এর জনগণ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যের জন্য বাংলাদেশ যে গর্ব করত তা ছিল যৌক্তিক।”
বাংলাদেশের এই অবস্থানকে ম্লান করে দিতে জুলহাজ হত্যাকাণ্ড বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হত্যায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রস্তাব তুলে ধরে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, “যে কাপুরুষরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে আমাদের সহযোগিতার অঙ্গীকার করছি।”
এ কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে তদন্তকারীদের কাজটি ঠিকমতো করতে দেওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।