খেলাধুলা

‘কালো মানুষের রক্তে ক্রিকেট নেই’

এ বি এন এ : বর্ণবৈষম্যের অভিযোগে প্রায় খবরের শিরোনাম হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট। দলে কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কখনো কখনো দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে চাপের কথাও শোনা যায়। কালোদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তারা কোটা পদ্ধতিও চালু করেছে। কিন্তু সত্য কথা বলতে কী, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে শ্বেতাঙ্গদের দাপট সব সময়। সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও আইন করার পর সেভাবে উঠে আসেনি কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়রা। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার হলেন সাবেক পেসার মাখায়া এনটিনি। দেশটির ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলার বলা হয়ে থাকে তাকে। এছাড়া আর বড় কোনো কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ের ছবি দর্শকদের সামনে ভেসে ওঠে না। তবে হালের কাগিসো রাবাদা ও বাভুমা দারুণ নজর কেড়েছেন। এই দুই কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অপরিহার্য সদস্য হয়ে উঠেছেন। কিন্তু মোট জনসংখ্যার হিসেবে এটা খুবই সামান্য। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কৃষ্ণাঙ্গ। ২০ শতাংশের কম শ্বেতাঙ্গ, এশিয়ান ও মিশ্র বর্ণের। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের দিকে তাকালে মনে হয় দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের প্রাধান্য। জাতীয় দলের কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু থাকলেও কেন খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়ছে না তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে সম্প্রতি এর এক ব্যাখ্যা দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সাবেক ক্রিকেটার ড্যারিল কুলিনান। তিনি মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের রক্তের মধ্যে ক্রিকেট নেই। বরং তাদের রক্তে বইছে ফুটবল। দক্ষিণ আফ্রিকার ফুটবল দলের দিকে লক্ষ্য করলেই সেটা বুঝা যায়। সংখ্যায় কম হলেও শ্বেতাঙ্গ ও মিশ্র বর্ণের আফ্রিকানদের রক্তে ক্রিকেট রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সম্প্রতি জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ক্রিকইনফো’কে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন, এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমার মনে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের রক্তে ক্রিকেট নেই। কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ফুটবল বেশি জনপ্রিয়। সরকারী স্কুলগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। সেখানে ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবল মাঠ তিন গুণ বেশি। কেন? কারণ, এটাই চাহিদা। আপনি যে খেলাকে বেশি ভালবাসবেন সেটাতে ভাল করবেন- এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে কৃষ্ণাঙ্গদের ভেতর থেকে ক্রিকেটারের চেয়ে ফুটবাল বেশি হয়। আপনি এখন আরেকজন মাখায় এনটিনি (কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার) এনে দিতে পারবেন না।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান দলে দুই কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় কাগিসো রাবাদা ও বাভুমা দারুণ করছেন। ‘আরকেজন এনটিনি এন দাও’- কুলিনানের এমন কথার পর এই দু’জনের বিষয়টি তার সামনে আনা হয়। তখন তিনি বলেন, ‘দেখুন, জনসংখ্যার হিসেবে এই দুইজন কি যথেষ্ঠ? আরো বেশি কেন হচ্ছে না? এটা আগ্রহ ও ভালবাসার বিষয়। শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে আপনি বেশি ক্রিকেট খেলা দেখতে পাবেন। আর কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে আপনি ক্রিকেট মাঠ নাও পেতে পারেন। এনটিনি তো মিলিয়নের মধ্যে একজন।’ ড্যারিল কুলিনান ১৯৯৩ থেকে২০০১ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৭০ টেস্ট ও ১৩৮ ওয়ানডে খেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট এখন পর্যন্ত তিনি সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি সেঞ্চুরি করেন। এছাড়া প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৩৩৭ রানের রেকর্ডটিও তার দখলে। অন্যদিকে জাতীয় দলের হয়ে ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ডে ২৭৫* রানের ইনিংস খেলেন। দীর্ঘদিন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল এটিই। ২০১২ সালে তাকে টপকে ৩১১ রানের ইনিংস খেলে সবার ওপরে উঠে যান হাশিম আমলা।

Share this content:

Related Articles

Back to top button