
এবিএনএ : বিএনপিকে ‘গাঁজাখুরি’ কথা বাদ দিতে পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শুধু কথামালায় ভোট পাওয়া যাবে না। আর এই কথামালাকে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘লিপ’ সার্ভিস হিসেবে। বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বিএনপির দাবিকে ‘গাঁজাখুরি কথা’ হিসেবে বিবেচনার কথা জানান কাদের। সেই সঙ্গে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। জনগণ আওয়ামী লীগের উন্নয়নে খুশি দাবি করে কাদের আশা করেন, আগামী নির্বাচনে তারা আবার জিতবেন। ‘আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) শতাধিক এলাকায় (স্থানীয় সরকারের) ভোট আছে। তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে ৯০ ভাগ আসনে আমরা জয়লাভ করেছি। আমাদের জনপ্রিয়তা বিপুল। এই জনপ্রিয়তায় ভর করেই আগামী নির্বাচনে আমরা জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিএনপিপন্থীদের জয়ের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির নির্বাচন দিয়ে জাতীয় নির্বাচনকে মাপা যায় না। এটা নিয়ে তারা জয়ের স্বপ্ন দেখছে। তারা এখন এভাবেই স্বপ্ন দেখছে।’ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিএনপি কী এমন করেছে যে বাংলাদেশের মানুষ তাদের মনে রাখবে? শুধু লিপ সার্ভিস দিয়ে কী ভোট পাওয়া যাবে?’। ‘এখন মানুষ ইলেকশন মুডে আছে। আন্দোলন মুডে নেই। মানুষ খুশি উন্নয়ন ও কর্মকাণ্ডে।’
‘গাঁজাখুরি কথা বাদ দেন’
নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিকে গাঁজাখুরি কথা বলে উড়িয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘তারা (বিএনপি) বলছেন প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে দেশ কে চালাবে? ফখরুল সাহেব দেশ চালাবেন? খালেদা জিয়া জেল থেকে বেরিয়ে দেশ চালাবেন? এই ধরনের গাঁজাখুরি কথা বাদ দেন।’ ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবে নির্বাচন হবে।’ সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতে চাইছে চলে দলটির অভিযোগেরও জবাব দেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘ঘরে বসে প্রেস ব্রিফিং করে মিথ্যাচার করছে। তাদের আর কোনো পুঁজি নেই।’ ‘এখন তারা বলছে তাদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে সরে রাখতে সরকার। এটা কীভাবে? নির্বাচন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তাদেরকে সরাবে কে?’
‘দণ্ডিত হলে নেতৃত্বে থাকা উচিত নয়’
দুর্নীতির দায়ে বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় তার বিএনপির নেতৃত্বে থাকা উচিৎ নয় বলেও মনে করেন কাদের।বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়া ৭ ধারার বিষয়ে কাদের বলেন, ‘তাদের গঠনতন্ত্রেই ছিল যে, যদি কেউ রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮ এর বলে দণ্ডিত হয় তাহলে তিনি বিএনপির কোনো পর্ায়ের নেতা হতে পারবেন না। এবং সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।’‘আমরা বিএনপির কাছে বারবার প্রশ্ন করেও এই জবাবটি পাইনি যে, বেগম জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পরপরই হঠাৎ করে রাতের বেলা এক কলমের খোঁচায় সাত ধারা কেন বাদ দেয়া হল?’।‘তার মানে হলো এখন থেকে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি পদে থাকার বিষয়ে কোন অসুবিধা নেই। উন্মাদ হলেও থাকতে পারবেন। সামাজিকভাবে দুর্নীতিবাজ হলেও থাকতে পারবেন। কুখ্যাত হলেও থাকতে পারবেন।’ তার মানে হচ্ছে বিএনপি এখন মেনেই নিয়েছে তারা এখন আত্মস্বীকৃতিবাজ দুর্নীতিগ্রস্তদের দল। আত্মস্বীকৃত দণ্ডিত দল।’ ‘কেন তারা বাদ দিল সেই প্রশ্নের জবাব আজও ফখরুল সাহেবদের কাছে পাইনি। কারো কাছেই পাইনি। বারবার প্রশ্ন করেছি। কিন্তু প্রশ্ন করি, একটা তারা চলে যান আরেক দিকে। সরাসরি তারা উত্তর দেয় না। এই প্রশ্নটা তারা বিব্রত কেন। আমি আবারও জানতে চাই।’
‘বিএনপি সব অধিকার পাচ্ছে’
বিএনপিকে গণতান্ত্রিক কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বিএনপিকে অধিকার দেয়া না হলে মঙ্গলবার দলটি রাজধানীতে কীভাবে শোভাযাত্রা করল সেটিও জানতে চান কাদের। বলেন, ‘কাজেই তাদের এসব অভিযোগ যে অবান্তর সেটা বোঝা যায়। গতকাল মানুষকে কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিয়ে তারা র্যালি করেছে। সরকার যদি অনুমতি না দিত তাহলে তারা কীভাবে র্যালি করল?’ তাহলে বিএনপি কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে না-এমন প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কি তারা এই সরকারের সময়ে সমাবেশ করেনি? তারা করেছে। সমস্যা হচ্ছে- তাদেরকে অনুমতি না দিলে তারা মনে করে সরকার গণতন্ত্রকরণ করেছে। আর দিলে তারা বলে সরকার বাধ্য হয়েছে অনুমতি দিতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকার কোন দিকে যাবে।’ বিএনপি আমলের পরিস্থিতি কেমন ছিল সেটাও জানান কাদের। বলেন, ‘তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আমরা বিরোধী দলে ছিলাম। ২১ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা আমরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দিয়েছিলাম। তারা আমাদের কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি।’ ‘এমনকি আমাদের অফিসের বারান্দায় সভা করতে পারিনি। ভেতরে গিয়েছি সেখানেও তারা সভা পণ্ড করে দিয়েছে।’
সেই প্রতিবেদন নিয়ে খোঁজ নিচ্ছে সরকার
বাংলাদেশে নূন্যতম গণতান্ত্রিক রীতি নীতি নেই বলে একটি জার্মান প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া তারা পরে জানাবেন। ‘যেই মুহূর্তে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেল সেই মুহূর্তে এই ধরনের রিপোর্টের মানে কী? আমরা কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। সেগুলো খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব।’ ‘সড়কের অবস্থা কোথায় বেহাল?’ এক প্রশ্নে দেশের সড়ক-মহাসড়কের কোনটি বেহাল, তা জানাতে চান কাদের। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভাঙাচোরা সড়কের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে চলেন দেখেন। কোথায় বেহাল অবস্থা?’ ‘কিছু এলাকা আন্ডার কনসট্রাকশন। সেখানে কাজ হচ্ছে, ধূলো জমে। সেখানে তো যানজট হবেই।’
‘এখন রাস্তাগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। এখন তো একটু কষ্ট হবে। জন্মের সময় তো একটু কষ্ট হয়ই। তিন/চার মাস পরে দেখবেন আর সমস্যা থাকবে না।’ ‘উন্নয়নকাজ হলেও প্রাথমিকভাব কষ্ট হবেই। এটা আমাদের বোঝতে হবে। চার লেনের কাজ চলছে।’
Share this content: