
এবিএনএ : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ভোট নেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবারের ভোটে দুই লাখ ভোটে পরাজয়ের পরদিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান। তার দাবি, গাজীপুরে তাদের জয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ‘তারা (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রের সকল যন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। এই নির্বাচন নির্বাচনের নামে শুধুমাত্র একটি তামাশা হয়েছে। ভোট ডাকাতির নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে তা প্রয়োগ করেছে। আমরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’ মঙ্গলবারের আলোচিত ভোটে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পড়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নৌকায় পড়েছে চার লাখ ১১ ভোট। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দলের অর্ধেক ভোটও পায়নি বিএনপি।
ব্যালটে নেয়া ভোটকেন্দ্রের মতোই ইভিএমে নেয়া কেন্দ্রগুলোতেও বিএনপি অর্ধেকের কম ভোট পেয়েছে আওয়ামী লীগের তুলনায়। ছয়টি কেন্দ্রে ধানের শীষের পক্ষে যেখানে দুই হাজার ২৯৭টি ভোট পড়েছে, সেখানে নৌকায় পড়েছে চার হাজার ৮১০ ভোট।
তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করে ফখরুল বলেছেন, খুলনায় ‘নতুন কৌশলে ভোট ডাকাতি’র ধারাবাহিকতায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে।’ ‘নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে।’ মঙ্গলবার গাজীপুরে যে ৪২৫টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে নয়টিতে সিলমারাসহ নানা কারচুপির অভিযোগে ভোট বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। বাকি কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ। তবে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার একশটিরও বেশি এবং দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী দুইশটিরও বেশি কেন্দ্র দখল করে সিল মারার অভিযোগ এনেছেন।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিচ্ছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না।’ বিএনপি নেতার অভিযোগ, গাজীপুরে ব্যালটপেপারে সিল মেরে নৌকার পক্ষে বাক্স বোঝাই করা হয়েছে ভোটের আগের রাত থেকেই।এর বাইরে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই গণগ্রেপ্তার, সাদা পোশাকের পুলিশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, ভাঙচুর, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে না দেয়া ও ভোটের দিন এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগও আনেন বিএনপি মহাসচিব। নির্বাচন কমিশন তাদের নিজেদের আইন কখনই প্রয়োগ করেনি অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী ও দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে ক্রমাগত অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন কোনো কিছুই আমলে নেয়নি। বিশেষ করে গাজীপুরের পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও নির্যাতনের বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন দাবি
বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে কমিশন ভেঙে দেয়ারও দাবি জানান ফখরুল। এক প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ এবং পুনর্গঠন চায়। কারণ নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তাই নতুন করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।’
তিন সিটি নির্বাচনে যাবে বিএনপি
খুলনার পর গাজীপুরেও কারচুপি করে হারানোর অভিযোগ করলেও রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলেও জানান ফখরুল। ভোটে হারলে কারচুপির অভিযোগ আর নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা না থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণ জানতে চাইলে বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্ন সরকারের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও পক্ষপাতিত্ব প্রমাণিত হচ্ছে এই নির্বাচন গুলোর মধ্য দিয়ে।’ ‘সরকারের এই নির্লজ্জ গণবিরোধী চরিত্র উন্মোচনের জন্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসাবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানসহ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
Share this content: