
এবিএনএ: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিবর্তনের জন্য মানুষের মনে ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে। সরকার কখন যাবে তার জন্য জনগণ অপেক্ষা করছে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা নাকি জনগণের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ব্লেম গেম করছি। বলার উদ্দেশ্যটা হচ্ছে একটা অডিও বেরিয়েছে আমাদের দুই নেতার মধ্যে কথোপকথন। যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের রাজশাহী জেলার সেক্রেটারিকে গ্রেফতার করেছে।
তিনি বলেন, আজকালকার প্রযুক্তির যুগটা আমরা এত ভালো করে বুঝি, মানুষ এত ভালো বুঝে যে আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাপনও তৈরি করে দেয়া যায়। কোনো কঠিন কাজ না। আপনারা নিজেরাই দেখতে পারেন কার কত রকম ছবি বের হয়, এর ঘাড়ে ওর মাথা। এটাই করেছেন আপনারা। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রত্যেকটা মানুষ বোঝে, আপনারা কী করছেন। তাদের মনে ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে, কখন আপনারা যাবেন। কখন পরিবর্তনটা হবে। সুতরাং পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই ব্লেম গেমটা আপনারা করছেন, আমাদেরকে ব্লেম করার জন্য। ২০১৫ সালের আন্দোলনের সময় এভাবে পেট্রোল বোমার কথা সবার মনে আছে। পত্র-পত্রিকায় দেখা গেছে, যুবলীগ-ছাত্রলীগ ধরা পড়ছে। আর দোষ হয়ে গেল আমাদের। একইভাবে এখনও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে হত্যা করে জাস্টিফাই করার জন্য যত রকমের কাজ আছে আপনার তা করছেন। সোজা হিসাব, আমার দলের একটি মিটিং করছি এর মধ্যে কি আমার দলের কেউ বোমা মারবে? আপনাদের মনে আছে, নয়াপল্টনের সামনে আমরা বিরাট মিটিং করছিলাম। সেদিন ১৫৪ জন গ্রেফতার হল। আমি যখন ওই মিটিংয়ে ট্রাকের ওপর উঠলাম তখন নাইটিঙ্গেল মোড়ে দুইটা পটকা ফুটল। মাহমুদুর রহমানকে যেই লোক পিটিয়েছেন এই লোক সেদিন এখানে ছিল।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা যেকোনো সময় সমাবেশ করার আগে ভয় পাই। কেন ভয় পাই জানেন? ওই যে ব্লেম গেম। ওরাই পটকা মেরে বলবে আমরা পটকা মেরেছি। এটাই হচ্ছে সমস্যা। এই সরকার এই গেমগুলো খুব ভালো জানে। তারাই এ খেলা খেলতে অভ্যস্ত। বক্তৃতাকালে কুষ্টিয়ায় দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে আমি অনেক পছন্দ করি। তার মতের সঙ্গে আমার অনেক মিল আছে। সেই মাহমুদুর রহমানের কী হাল করেছে দেখেছেন আপনারা। বিএনপি মহাসচিব বলেন, কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশের এখন আর কোনো জনপদ নেই। কুষ্টিয়া এখন সম্পূর্ণভাবে কিছু সন্ত্রাসীর দখলে। প্রশাসনও সেখানে সন্ত্রাসী হয়ে গেছে, পুলিশ সেখানে সন্ত্রাসী হয়ে গেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির চরিত্র সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বারবার মনে রাখতে হবে সম্পূর্ণ বৈরী পরিবেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি। এ কথা ভুললে চলবে না যে আমরা সম্পূর্ণ ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে বাস করছি। ফ্যাসিস্ট কথাটায় জোর দিচ্ছি, কারণ মাহমুদুর রহমান তার পত্রিকায় সর্বপ্রথম লিখেছিলেন- ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। আর আজকে ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি বুকে পাড়া দিয়ে বসে গেছে।
কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর তা আপিল বিভাগ আটকে রাখার ঘটনা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এনপিপি সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তৃতা করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মুস্তফা, জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া প্রমুখ।
Share this content: