সবজির বাজারে আগুন, সক্রিয় সিন্ডিকেটের দাপট – ভোক্তাদের নাভিশ্বাস
সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও নানা অজুহাতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সবজির দাম, ক্রেতাদের অভিযোগ সিন্ডিকেটের কারসাজি


এবিএনএ: রাজধানীসহ সারাদেশে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে সবজির বাজার। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম যেন রীতিমতো আগুন। প্রতিদিন নতুন করে বাড়ছে দরদাম। ক্রেতারা বলছেন—“এটা কেবল মৌসুমি সমস্যা নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে দাম বাড়াচ্ছে।”
ঢাকার বাজারের চিত্র
রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ানে করলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০-১০০ টাকা, শসা ৮০, ঢেঁড়স ৭০-৮০, টমেটো ১৬০-১৮০, বরবটি ১০০, ঝিঙা ৮০, কচুর লতি ৮০-১০০ এবং গোল বেগুন ১৪০ টাকা কেজি দরে। সবচেয়ে বেশি চমকে দিয়েছে কাঁচামরিচের দাম, যা পৌঁছেছে ২২০-২৪০ টাকায়।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে দাম আরও বেশি। সেখানে বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪০-১৬০ টাকায়, করলা ১২০, গাজর ১২০, ক্যাপসিকাম ৫০০ এবং শিম ২৪০-২৫০ টাকায়। পুঁই শাকের আঁটি মিলছে ৪০ টাকায়।
মিরপুর ১৪ নম্বর বাজারে টমেটো ১৮০, বেগুন ২০০, শিম ৩০০, কাঁচামরিচ ১৬০-২০০, ধনেপাতা ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের অভিযোগ, “মৌসুম শেষ” বা “বৃষ্টি-বন্যা”র অজুহাত দেখিয়ে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন।
বিভাগীয় শহরগুলোর অবস্থা
খুলনা, বরিশাল ও সিলেটের বাজারেও একই চিত্র। খুলনায় করলা ১০০, টমেটো ১৬০ এবং কাঁচামরিচ ২০০ টাকায় মিলছে। বরিশালের খুচরা বাজারে বেগুনের কেজি ১৬০ এবং কাঁচামরিচ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিলেটে শসা, কচুরমুখী, করলা থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের সবজি ২০-৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
তবে ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম। স্থানীয় উৎপাদন বেশি থাকায় রিয়াজউদ্দিন বাজারে করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙা ২০-৩০ টাকায়, এমনকি লাউ প্রতি পিস মাত্র ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা ও বিক্রেতার অভিমত
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরকারের মনিটরিং নেই বললেই চলে। কেউ একজন বললেন—“আগে তিন দিনের বাজার হতো ৫০০ টাকায়, এখন ১০০০ টাকাও যথেষ্ট নয়।”
রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের আক্ষেপ—“দিনে ৫০০ টাকা আয় করি, সবটাই বাজারে চলে যায়। মাছ-মাংস তো দূরের কথা, সবজিও কিনতে পারছি না।”
অন্যদিকে বিক্রেতারা দাবি করছেন, পরিবহন খরচ, বন্যা ও আবহাওয়ার কারণে সরবরাহ কমে গেছে। তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন, বড় ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার ও ক্যাবের পর্যবেক্ষণ
ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের অভিযান চলছে। তবে ক্রেতাদের মতে জরিমানার অঙ্ক এতটাই সামান্য যে ব্যবসায়ীরা ভয় পায় না।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মনিটরিং কমে যাওয়ায় বাজার আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সমাধান কোথায়?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের কঠোর নজরদারি ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে শৃঙ্খলা ফিরবে না। সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে সবজির বাজার নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।