চাঁদা না দেওয়ার অভিযোগে জনকণ্ঠ ভবন দখলের দাবি মালিকপক্ষের, সাংবাদিকদের পাল্টা প্রতিবাদ
জনকণ্ঠ ভবন দখল ও লুটপাটের অভিযোগ মালিকপক্ষের, সাংবাদিকদের দাবি—আসলে চলেছে বকেয়া বেতনের দাবিতে ন্যায্য আন্দোলন


এবিএনএ: জনকণ্ঠ ভবন ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মালিকপক্ষ দাবি করছে, ১০ কোটি টাকা চাঁদা না দেওয়ায় একটি গোষ্ঠী ভবনটি দখল করেছে। পত্রিকার সম্পাদক শামীমা এ খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযোগ করেন। তবে সাংবাদিকরা এই অভিযোগকে ‘পুরোটাই ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং বকেয়া বেতন পরিশোধ না হলে কর্মবিরতির আলটিমেটাম দিয়েছেন।
সোমবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর ইস্কাটনে পত্রিকাটির নিজস্ব ভবনে সাংবাদিক-কর্মচারীদের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে বিস্তর বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
সম্পাদকের অভিযোগ
সম্পাদকের দাবি, জনকণ্ঠের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আফিজুর রহমান ও একাধিক শীর্ষ সাংবাদিক পরিকল্পিতভাবে পত্রিকা দখল ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। এর পেছনে রয়েছে চাঁদা আদায়ের ব্যর্থ প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
বলা হয়, ১ আগস্ট রাতে পত্রিকার টেমপ্লেট বদলিয়ে ‘লাল’ থেকে ‘কালো’ করা হয়, যা পরে বিক্ষোভের কারণ হয়। এ নিয়ে দু’দিন পর ২০ জন সাংবাদিককে বরখাস্ত করা হয়।
সম্পাদকের ভাষ্য,
“আমার দুই সন্তানসহ আমাকে ভবন থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মামলা দেওয়া হয়েছে। এটি দেশের সংবাদপত্র ইতিহাসে নজিরবিহীন।”
সাংবাদিকদের পাল্টা বক্তব্য
সংবাদ সম্মেলনে পত্রিকার সাংবাদিক ও কর্মচারীরা দাবি করেন,
“জনকণ্ঠে চলছে বেতন বকেয়া নিয়ে ন্যায্য আন্দোলন। মালিকপক্ষের অব্যবস্থাপনা, অহংকার ও ফ্যাসিবাদী আচরণের কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”
ইসরাফিল ফরাজি, ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, বলেন,
“আমাদের কারো চাঁদা দাবি নেই। বরং সম্পাদকপক্ষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাদেরকে অপবাদ দিচ্ছে। ১৫ কোটি টাকার বেতন বকেয়া, অথচ আমরা শুধু পাওনা চাইছি।”
৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়:
১. ছাঁটাই করা সাংবাদিকদের পুনর্বহাল
২. কালো টেমপ্লেট ইস্যুতে মালিকপক্ষের জবাবদিহি
৩. পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ঘোষণা (৬-৭ আগস্ট)
৪. ১৫ কোটি বকেয়া বেতন অবিলম্বে পরিশোধ
৫. সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগ
৬. অব্যাহত চাঁদাবাজি ও অপপ্রচারের তদন্ত
৭. প্রতিষ্ঠান বন্ধের ষড়যন্ত্র বন্ধ
৮. সাংবাদিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ
ইউনিয়ন নেতাদের মন্তব্য
বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন,
“জনকণ্ঠের মতো প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে ৩০ জন সাংবাদিক ছাঁটাই নজিরবিহীন। মালিকপক্ষ পত্রিকাটি বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। প্রায় ৩০-৪০ কোটি টাকার দায়ে ডুবে আছে প্রতিষ্ঠান।”
শেষ কথা
মালিকপক্ষের অভিযোগ এবং সাংবাদিকদের পাল্টা দাবিতে জনকণ্ঠ ভবনে এখন কার্যত দ্বন্দ্ব ও বিভক্তি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। সাংবাদিক সমাজ এবং পত্রিকা প্রেমীরা এই পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান চাচ্ছেন।