বিনোদন

সংকটাপন্ন কিংবদন্তি: লাইফ সাপোর্টে ফরিদা পারভীন, ৭২ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে

বাংলা লালন সংগীতের মহীরুহ ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আগামী ৭২ ঘণ্টা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

এবিএনএ:  বাংলা সংগীতাঙ্গনের অন্যতম নক্ষত্র ও লালন সংগীতের মহীরুহ ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থা চরম সংকটাপন্ন। রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা তার জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শনিবার দুপুরে শিল্পীর মেয়ে জিহান ফারিহা জানান, “আম্মার অবস্থা আগের তুলনায় অনেক খারাপ। উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিশেষ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে এবং ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ডাক্তাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন।”

শিল্পীর বড় ছেলে ইমাম জাফর নুমানী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “গত বুধবার থেকে আম্মাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্তচাপ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্তচাপ চালু রাখা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উন্নতির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।”

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সরকারি পর্যায় থেকেও নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে চিকিৎসার জন্য কোনো আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে একটাই অনুরোধ— সবাই যেন ফরিদা পারভীনের জন্য দোয়া করেন।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “ফরিদা পারভীনের শরীরে মাল্টি অর্গান ফেইলিউর হয়েছে। তার কিডনি ও মস্তিষ্ক কাজ করছে না, ফুসফুসে জটিলতা দেখা দিয়েছে, হৃদযন্ত্রে অনিয়মিত স্পন্দন রয়েছে এবং রক্তের সংক্রমণ শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। রক্তচাপ অতি কম থাকায় ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হয়নি। তাকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে এবং আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা বোঝা যাবে।”

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর আগে জুলাই মাসেও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে আইসিইউতে ভর্তি হতে হয়েছিল। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল। গত বুধবার তার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হলে আবারও সংকট দেখা দেয়।

দেশাত্মবোধক গান দিয়ে সংগীতজীবন শুরু করলেও লালন সংগীতের মাধ্যমেই তিনি নিজস্ব পরিচয় গড়ে তোলেন। গুরুদের কাছ থেকে লালনের দর্শন ও সংগীতের গভীরতা উপলব্ধি করে তিনি গেয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান, যার মধ্যে রয়েছে ‘মিলন হবে কত দিনে’ ও ‘অচিন পাখি’।

১৯৭৮ সালে সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদক পান। এছাড়া জাপান সরকার তাকে কুফুওয়া এশিয়ান কালচারাল পুরস্কার প্রদান করে। দেশ-বিদেশে আরও অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

শুধু গানেই নয়, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে লালনের দর্শন ছড়িয়ে দিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘অচিন পাখি স্কুল’, যেখানে শিশু-কিশোরদের লালন সংগীত শেখানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button