বিদেশির হাতে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল, কিন্তু ১২% কাজেই আটকে গেল সম্ভাবনার জাহাজ
বহুজাতিক বিনিয়োগ, আধুনিক সরঞ্জাম আর প্রতিশ্রুতির পাহাড়—তবু পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে কাঙ্ক্ষিত গতি নেই; কাজ হচ্ছে সামান্যই

এবিএনএ: চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে বিদেশি পরিচালনা সত্ত্বেও কার্যক্রমে গতি আসছে না। দিনে ১৩৬৯টি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা থাকলেও, চলতি সময়ে গড়ে ১৭০-১৮০ কনটেইনার পরিচালিত হচ্ছে। যা মূল লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১২ শতাংশ।
বন্দর কর্তৃপক্ষের আশা ছিল, এই টার্মিনাল সম্পূর্ণ চালু হলে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব অর্জন সম্ভব হবে। তবে বাস্তবে এমন সাফল্য ধরা দেয়নি। প্রধান সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের ঘাটতি, দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরতা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৮৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালটি নির্মাণ করে। ২২ বছরের জন্য সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই) পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। প্রতিষ্ঠানটি ২৪০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও গত ১০ মাসে তা বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ১১৯ মিলিয়ন ডলার।
পরিস্থিতি সামান্য কিছুটা বদলায় ২ মে, যখন সিঙ্গাপুর পতাকাবাহী জাহাজ একসঙ্গে ১৭১২টি আমদানি কনটেইনার নিয়ে প্রথমবার সরাসরি পতেঙ্গা টার্মিনালে নোঙর করে। এটি আগামী জুলাইয়ে রপ্তানি নিয়ে ফিরবে। এর আগে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম একসঙ্গে পরিচালনার এমন ঘটনা ছিল না।
টার্মিনালটিতে রয়েছে তিনটি জেটি, যেখানে তিনটি জাহাজ একসঙ্গে নোঙর করতে পারে। তেল খালাসের জন্যও আলাদা ডলফিন জেটি স্থাপন করা হয়েছে। টার্মিনালটি চালু হলে বছরে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডল করতে পারবে বন্দর।
আরএসজিটিআই-এর দাবি, তারা ইতিমধ্যে ৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গেটওয়ে ভেসেল পরিচালনা করেছে এবং সেবা উন্নয়নে ১৪টি আরটিজি ক্রেন ও ৪টি এসটিএস ক্রেন সংযুক্ত করেছে। এছাড়া আধুনিক স্ক্যানার যুক্ত করা হয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ কনটেইনার স্ক্যান করতে সক্ষম।
তবে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন থেকে এপ্রিলে পর্যন্ত মোট কনটেইনার হ্যান্ডল হয়েছে মাত্র ৫২ হাজার ২৯টি টিইইউএস। অথচ প্রত্যাশা ছিল প্রতিমাসে ৪১ হাজারের বেশি হ্যান্ডলিং।
বন্দরের রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান জানান, বিদেশি পরিচালনা থেকে রাজস্ব আসছে ঠিকই, তবে গতির ঘাটতি রয়েছে। একই মত দিয়েছেন শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজনও, তবে তিনি বিদেশি অপারেটর নিয়োগকে সময়োচিত সিদ্ধান্ত বলেছেন।
সবমিলিয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে বিদেশি বিনিয়োগ ও পরিচালনার এই মডেলটি কার্যকর হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে বর্তমানে যে ধীরগতির চিত্র সামনে আসছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে এই বিশাল বিনিয়োগ ও সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
Share this content: