দেশে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ মূলত একটা চক্রান্ত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘এই চক্রান্তের সঙ্গে বিএনপির এক নেতার বাবা, সাবেক খাদ্যসচিব জড়িত ছিলেন। ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল একটা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। এর সঙ্গে বিএনপির এক নেতার বাবা জড়িত ছিলেন। আর তারা এখন গণতন্ত্রের কথা বলেন।’ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপির এক নেতার বাবার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অনেককে ভালো করে চিনি, বড় বড় কথা বলেন। বিএনপির এক নেতার বাবা ছিলেন খাদ্যসচিব। বাংলাদেশে ৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষ ছিল সেটার সঙ্গে কিন্তু আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে এরাও জড়িত ছিল। নগদ টাকা দিয়ে কেন খাদ্যের জাহাজ সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খাদ্য নিয়ে তারা কথা বলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার পর কিন্তু জিয়াউর রহমান বিএনপির নেতার বাবাকে পুরস্কৃত করে মন্ত্রী বানিয়েছেন। মন্ত্রী হওয়ার কী যোগ্যতা ছিল তার! তিনি ছিলেন সচিব কিন্তু এই ঘটনা ঘটানোর জন্য তাকে মন্ত্রী বানিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু এখন তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। কিন্তু তাদের অপকর্মের বিষয়গুলো আমাদের জানা আছে। সময় আসলে আরও প্রকাশ হবে। স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করার জন্য স্বাধীনতা অস্বীকার করা, কৃত্রিম উপায় দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, নানা ধরনের বদনাম করে জাতির পিতাকে মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। যখন দেখছে বাঙালির জাতির মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যাবে না তখনি বঙ্গবন্ধুকে ১৫ আগস্ট হত্যা করে।
আ.লীগ সভাপতি বলেন, পাকিস্তান নামের যে রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল সেখানে পূর্ব বাংলার অবদান ছিল। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের কথা বলেই জেলে গিয়েছেন। ৪৮ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধু মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। পাকিস্তানের ৫৬% ছিল বাঙালি সেখানে আমাদের অধিকারই ছিল না। পাকিস্তানের শাসন আমাদের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এর প্রতিবাদই শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৭ সালের পর থেকেই পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনী বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে রিপোর্ট লেখতো।
সরকারপ্রধান বলেন, ইতিহাস বিকৃতি করে বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার করা বাংলাদেশের এক শ্রেণির লোক এটিকে মর্যাদা মনে করে। এখনো কিছু লোক আছে আমরা যা করি তাদের কিছুই ভালো লাগে না। এই ভালো লাগে না লোকেরাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা ছড়ায়। এই লোকদের কিছুই ভালো লাগে না। এটাই হলো আসল কথা। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা হয়েছিল কিন্তু এখন আর তা সম্ভব নয়। তারা এটাও স্বীকার করে না, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ছুটি ঘোষণা করা, শহীদ মিনার নির্মাণে বাজেট দিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার ইতিহাসের অবদান থেকেও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসকে মুছে ফেলা হয়েছিল। কোথাকার কোনো একজন মেজর সাহেব ড্রামের উপরে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিল আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল। এমন ইতিহাস বিকৃতি করে শোনানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মানুষের উপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একবার আরবি হরফে বাংলা লিখতে হবে এরপর রুমান হরফে লিখতে হবে, এই রকম করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারা যেন বাংলাদেশ ভাষা স্বীকার করবে না। কিন্তু উর্দুভাষার কিন্তু কোনো মাতৃভাষা না। গোটা পাকিস্তানে মাত্র ৭% লোক উর্দুভাষার কথা বলতো। পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ কিন্তু তাদের নিজস্ব কথা বলে। বঙ্গবন্ধু অবদানকে ঘাটো করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হলেও ইতিহাসকে মুছে ফেলতে পারেনি, পারবেও না। বঙ্গবন্ধু কখনো থেমে থাকনি,জেলে গেছেন আবার জেলে থেকে বেরিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে যে উন্মেষ ঘটেছিল সেই উন্মেষ থেকেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। যারা ইতিহাস বিকৃতি করে ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু্কে মুছে ফেলতে চেয়েছিল তারাই ধীরে ধীরে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্তি হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র ১০ মাসে একটা সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। চার মূলনীতি নিয়ে আমাদের সংবিধান উপহার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সার্বভূম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে একশ্রেণী আতেল ছিল তারা বলতো শেখ মুজিব আন্দোলনে সফল কিন্তু ভালো প্রশাসক ছিল না।
আমি যেখানে রাষ্ট্রপরিচালনায় হাত দেই প্রতিটা জায়গায়ই তিনি ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন তাহলে স্বাধীনতার ১০ বছর পরই বাংলাদেশ হতো ক্ষুধা দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে বাচতে দেয়নি স্বাধীনতা বিরোধীরা। বিভিন্নভাবে মিথ্যাচার করেছে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি।