এবিএনএ : টানা দ্বিতীয় দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশি-বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতিতে একে একে শপথ নেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর। অনুষ্ঠানে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, সাবেক সভাপতি সোনিয়া গান্ধী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ বিরোধী দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নেতৃত্বে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলও যোগ দেয়।
মন্ত্রিসভায় মোট সদস্য ৫৮। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী, ২৪ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৯ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় নারী সদস্য ছয়জন। আর ১৯ জন রয়েছেন নতুন মুখ। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় মোদি শপথ নেওয়ার পর মন্ত্রীরাও একে একে শপথ নেন। মোদির সঙ্গে প্রথমেই মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, বিদায়ী মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিতারমন ও রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। সাবেক রেলমন্ত্রীকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার আলোচনাও রয়েছে। এ ছাড়া বিদায়ী মন্ত্রিসভার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ যাবেদকর ও স্মৃতি ইরানি, নীতিন গড়করী, সদানন্দ গৌড়াও শপথ নিয়েছেন। গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টনের খবর পাওয়া যায়নি।
নতুন মন্ত্রিসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবার দুজন স্থান পেয়েছেন। স্বাস্থ্যগত কারণে নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন বিদায়ী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। শপথ নেওয়া মন্ত্রিসভার উল্লেখযোগ্য অন্য সদস্যরা হচ্ছেন বিজেপি জোটের শরিক দল লোক জনশক্তি দলের প্রধান রাম বিলাস পাসোয়ান, শিরোনমানি আকালি দলের নেত্রী হারসিমরাত কমার বাদল, শত্রুঘ্ন সিনহাকে পরাজিত করা রবিশঙ্কর প্রসাদ প্রমুখ। মন্ত্রিসভার আরেকজন নতুন মুখ হচ্ছেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর।
শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপধান, দেশের রাজনৈতিক নেতা, মুখ্যমন্ত্রী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার অতিথি অংশ নেন।
২০১৪ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মোদি। ২০১৪ সালের আগে নতুন সরকারের শপথ হতো রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে। কিন্তু ওই বছর রীতি ভেঙে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরের চত্বরে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারও সেখানেই শপথ অনুষ্ঠান হয়। এবারের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথ নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগে এ অনুষ্ঠান বর্জনের কথা জানান তিনি। এ ছাড়া নতুন মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য দাবি করে না পাওয়ায় শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি বিজেপির শরিক দলের নেতা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ।
সুখবর নেই পশ্চিমবঙ্গে : ব্যাপক আলোচনা ছিল এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে অনেক ভালো করায় পুরস্কার হিসেবে রাজ্যবাসীকে আরো কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপহার দেবেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে দুজনকে পূর্ণমন্ত্রী করা হবে বলেও আলোচনা ছিল। আলোচনা ছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাঁচজনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাউকেই পূর্ণমন্ত্রী করা হয়নি এবং গতবারের মতো এবারও মোদির মন্ত্রিসভায় দুজন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে স্থান পেয়েছেন। গতকাল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দুই এমপি বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী।