জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

তিন সিটি নির্বাচনের মাঠ ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে: সুজন

এবিএনএ: রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শুরু থেকেই উৎসবমুখর প্রচারণা শুরু হলেও ক্রমশ মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা সত্ত্বেও ফাঁকফোকর গলিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ উঠছে। তিন সিটিতে আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়গুলো আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এসব বিষয়ে ইসির কার্যক্রর কোনো তৎপরতা নেই। প্রচারেও লেভেল প্লেইং ফিল্ড দেখা যাচ্ছে না। ভোট সামনে রেখে তিন সিটিতে পুলিশ যে হারে গ্রেফতার করছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে বক্তারা সতর্ক করে বলেন, তিন সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে জনগণের কাছে একাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা দেবে। অপরদিকে এ নির্বাচন যদি খুলনা ও গাজীপুরের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা নেতিবাচক বার্তা দেবে। তিন সিটি নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনায় তিন সিটি নির্বাচনে ৫৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৩৮ জন স্কুলের গণ্ডি পেরোননি। অর্থাৎ তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। এর মধ্যে বরিশালের একজন ও সিলেটের দুইজন মেয়র প্রার্থীও রয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, এর মধ্যে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় অর্থাৎ হত্যা মামলা রয়েছে। এ তিন সিটি নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের আধিক্য রয়েছে। ৫৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৮৭ জনই পেশায় ব্যবসায়ী। সম্পদ বিবেচনায় ২৫ জন প্রার্থী কোটিপতি। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ও সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সহসভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী। তিন সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন নিয়ে হতাশ হওয়ার অনেক কারণ আছে। খুলনা ও গাজীপুরের মতো তিন সিটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে নাকি সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। নির্বাচনী এলাকায় অনেককে পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। এত দিন তাদের ধরেনি, নির্বাচন আসার পর গ্রেফতার করা হচ্ছে- এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড দেখা যাচ্ছে না। চাকরিবিধি লংঘন করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচনী প্রচার করছে। এসব দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ইসি লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরির দায়িত্ব পালন করছে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের সঙ্গে ইসিকে বোঝাপোড়া করার পরামর্শ দেন তিনি।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে যেসব নির্বাচন হয়েছে তা একেকটি একেক ধরনের মডেল। একটি নির্বাচনের সঙ্গে আরেকটির মডেল মিলছে না। একেক সময় একেক ধরনের নির্বাচন হচ্ছে। কখনও রাতে ব্যালটে সিল মেরে রাখা হচ্ছে। আবার কখনও দিনে শান্তিপূর্ণ ভোটের মধ্যে হঠাৎ পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রের বাইরে তেমন সহিংসতা নেই, কিন্তু নির্বাচনটি হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত। মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখছে যে, তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে, কিছু কিছু কেন্দ্রে বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে ভোটের হার বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং যে প্রার্থী এক লাখ বা দুই লাখ ভোট পাচ্ছেন তিনি এজেন্ট দিতে পারছেন না। তার মানে কী? সরকারি দল নির্বাচনে আগ্রাসী আচরণ করছে?

তিনি বলেন, নির্বাচনে যা হচ্ছে তা সবই অপ্রত্যাশিত প্রবণতা। সামগ্রিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না। নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, সংশয় ও অবিশ্বাস থেকেই যাচ্ছে। এ প্রবণতা জাতীয় নির্বাচনে প্রভাবিত করলে তা খুব ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের বার্তার ওপর সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করছে জানিয়ে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, বর্তমান ইসির অধীনে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সরকার সুষ্ঠু ভোটের বার্তা দিয়েছিল। অপরদিকে একই ইসির অধীনে গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে প্রকাশ্যে জালভোট ও ব্যালটে সিল মারলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। এর অর্থ হচ্ছে, সরকার তরফ থেকে ভালোভাবে বার্তা গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে। আর ভালোভাবে বার্তা না গেলে তারা ঠিকভাবে কাজ করে না। সরকারের বার্তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শুরু থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচার শুরু হলেও আমরা লক্ষ্য করছি নির্বাচনের মাঠ ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ফাঁকফোকর গলিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রথম দিক থেকেই রাজশাহীতে মামলা শুরু হয়। এখনো সিলেটেও মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানি শুরু হয়েছে। বরিশালে নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা বাহিনী। এ ঘটনাগুলো একদিকে যেমন ভোটারদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে, তেমনি তারা অনেক ধরনের সন্দেহের দোলাচলেও রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। স্নাতক ডিগ্রিধারী হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মুরাদ মোর্শেদ।

আর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহাবুব। স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রার্থী হলেন- বিএনপির প্রার্থী মো. মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী। অপর দুজন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী বশীর আহমেদ ঝুনু এসএসসি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ স্বশিক্ষিত। সিলেট সিটি নির্বাচনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ডা. মো. বদরুজ্জামান হোসেন খান। স্নাতক ডিগ্রিধারীরা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও মো. বদরুজ্জামান সেলিম। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দীন আহমেদ কামরান এইচএসসি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এহছানুল হক তাহের এসএসসি পাস। স্বশিক্ষিত দুই প্রার্থী হচ্ছেন- বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী ও সমাজতান্ত্রিক দলের মো. আবু জাফর।

Share this content:

Back to top button