
এবিএনএ : করোনা ভাইরাসের কারণে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত এসেছেন ৩৩ হাজার ২১৬ প্রবাসীকর্মী। এর আগেও ওই দেশ থেকে কয়েক হাজার কর্মী ফিরেছেন বিভিন্ন কারণে। তারা এখন ফিরতে চান তাদের কর্মস্থলে। বাংলাদেশ ও সৌদির বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জটিলতায় কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে এতদিন অনিশ্চয়তায় ছিলেন তারা। এর পর টিকিটের জন্য শুরু হয় প্রাণপণ লড়াই। এবার ভিসা জটিলতায় যাত্রা আটকে গেল ২৯ হাজার ৮৯৮ জনের। কারণ গতকাল বুধবার শেষ হয়ে গেছে তাদের ভিসার মেয়াদ।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে ভিসা পাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সৌদিতে কর্মস্থলে ফিরতে ইচ্ছুকরা। তাই দ্রুত বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ চেয়েছেন তারা। টানা আন্দোলন-বিক্ষোভের পর গত সাত দিনে সৌদি আরব ফিরেছেন মাত্র তিন হাজার ৩১৮ জন। সৌদি আরব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর পর অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে সে দেশে ফেরা শুরু হয়। গতকাল গালফ অঞ্চলের ছয় দেশ এবং মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রবাসী ও শ্রমিক ইস্যুতে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, সৌদি ফিরতে ইচ্ছুক প্রায় ২৫ হাজার জনকে সে দেশে যেতে পুনরায় ভিসা নিতে হবে। দেশটিতে যাদের
চাকরি আছে কিন্তু করোনায় দেশে আসার পর ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যায়, তাদের আবারও ভিসা নিয়েই দেশটিতে ফিরতে হবে। সৌদি কর্তৃপক্ষ নতুন করে ভিসা ইস্যু করবে বলে আমাদের জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা গত মার্চে ভিসা নিয়েছিলেন, এর পর আর যেতে পারেননি; কিন্তু কফিল (চাকরিদাতা) আছে, তাদেরও ভিসা নিতে হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার জনকে নতুন করে ভিসা নিতে হবে।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ২৬ সেপ্টেম্বর ফ্লাইট শুরুর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে সৌদি আরবে গেছেন ৯১০ জন। তবে দেশটির অনুমতি না পাওয়ায় এখনো শিডিউল বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করতে পারেনি বিমান। তবে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের রিটার্ন টিকিটধারী যাত্রীদের কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই বিশেষ ফ্লাইটে সৌদিতে নিচ্ছে বিমান। ২৬ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর ২৬০ জন, ২৭ সেপ্টেম্বর ২৬৪ জন, ২৯ সেপ্টেম্বর ৩৮৬ জন সৌদি আরব গেছেন।
এদিকে ২৩ সেপ্টেম্বর ফ্লাইট চালুর পর সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সে সৌদি গেছেন দুই হাজার ৪০৮ জন প্রবাসী। ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করে এয়ারলাইন্সটি। এর মধ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর ২৫০ জন, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০৫ জন, ২৬ সেপ্টেম্বর দুটি ফ্লাইটে ৫১৩ জন, ২৭ সেপ্টেম্বর দুটি ফ্লাইটে ৬৭৭ জন, ২৮ সেপ্টেম্বর ৩৮৮ জন, ২৯ সেপ্টেম্বর ৩৭৫ জন সৌদি আরবে গেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান জানান, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১১টি ফ্লাইটে তিন হাজার ৩১৮ জন সৌদি আরব পৌঁছেছেন।
এদিকে গত কয়েক দিনের মতো গতকালও সকাল ৮টা থেকেই কারওয়ানবাজারের সোনারগাঁও হোটেলে সাউদিয়া (সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স) কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল সংখ্যা বেশি হলেও তারা সড়ক থেকে সরে ফুটপাতে অবস্থান নেন। অবিলম্বে সৌদি যাওয়ার টিকিট এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানান তারা। দ্রুত সৌদি পৌঁছাতে সাউদিয়া ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের কার্যকর পদক্ষেপও দাবি করেন তারা।
সেখানে অপেক্ষারত কয়েকজন জানান, এখন যাদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগের ভিসার মেয়াদ আগামী মাস পর্যন্ত আছে। অথচ অনেকের আজই ভিসার মেয়াদ শেষ হবে, তাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। এখনো তারা টিকিট পাচ্ছেন না। এ ধরনের জটিলতায় বিপাকে রয়েছেন অনেকেই। টিকিটপ্রত্যাশী মোস্তফা জামান বলেন, আমার ভিসার মেয়াদ আজই (গতকাল) শেষ। অথচ এখনো আমি টোকেন পাইনি। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে টোকেনের জন্য চেষ্টা করছি। শুনছি আগামী ৪ অক্টোবর টোকেন দেওয়া হবে। টোকেন পেলেও টিকিট পেতে আরও সপ্তাহখানেক লেগে যাবে। কী করব ভেবে কূল পাচ্ছি না ভাই।
এমন বিড়ম্বনায় পড়া কয়েকজন জানান, তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য নির্ধারিত ট্র্যাভেল এজেন্সিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এজেন্সিগুলো দূতাবাসে যোগাযোগ করতে বলছে। আবার দূতাবাসে গেলে কোনো সহায়তা মিলছে না। সব মিলিয়ে টিকিট পেতে বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে অনেকে টিকিটের জন্য টোকেন পেলেও গতকাল ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এমনই একজন গাজীপুরের মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমি টোকেন পেয়েছি কিন্তু এখনো টিকিটের জন্য সিরিয়াল পাইনি। আমার ভিসার মেয়াদ আজ (বুধবার) শেষ। বৃহস্পতিবারও যদি টিকিট কাটার সিরিয়াল পাই, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে আমি যেতে পারব না।
Share this content: