ব্যাংক খাতে আস্থার ঘাটতি: অর্থনীতি সংকটের গভীরে, বিনিয়োগ স্থবির
রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ সুদের চাপ ও ব্যাংকিং দুর্বলতায় থমকে আছে বিনিয়োগ; দেশের আর্থিক খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না


এবিএনএ: এক বছর আগে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটলেও এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আসেনি। এর প্রভাব পড়েছে অর্থনৈতিক খাতে, বিশেষ করে ব্যাংক খাতে তৈরি হয়েছে গুরুতর আস্থার সংকট।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, ব্যাংকিং খাতে তারল্যের ঘাটতি না থাকলেও চরম মাত্রার আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে।
২০২৫ সালের জুন শেষে নিট উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা—যা চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ। তবুও সেই অর্থ বিনিয়োগে আসছে না, কারণ রয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যবসায়ীদের দ্বিধা, এবং ব্যাংকিং অব্যবস্থাপনা।
বিশেষত এস আলম গ্রুপের প্রভাবাধীন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট এবং স্বচ্ছতার অভাব গোটা আর্থিক ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ‘পদ্ধতিগত অনাস্থা’ তৈরি হয়েছে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, ব্যাংক খাত পুনর্গঠনে প্রয়োজন হবে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। তার ভাষায়,
“এমন অর্থনৈতিক অবস্থা আগে বিশ্বে দেখা যায়নি। ব্যাংক খাত থেকে সরকার ৮০ শতাংশ অর্থ নিয়ে গেছে।”
বিশ্বব্যাংক ও বিশ্লেষকদের মতে, গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে—বিশেষ করে পোশাক ও ওষুধ শিল্পে। এতে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছেন, যা দেশের সামষ্টিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
তবে ইতিবাচক দিক হলো—গত এক বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেন,
“মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমছে, বিনিয়োগ নেই—এই বাস্তবতায় এখনকার ইতিবাচক প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সবকিছু নির্ভর করছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর।”
বিনিয়োগে অনাগ্রহ, কারখানা বন্ধ, ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত সরকারই হতে পারে একমাত্র সমাধান—মত অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।