জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

‘‘তুফানকাণ্ড’ বাংলাদেশকে লজ্জার মুখে ফেলে দিয়েছে’

এবিএনএ : বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, বাংলাদেশ যখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোড মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসা কুড়াচ্ছে, ঠিক তখন ‘তুফানকাণ্ড’ বাংলাদেশকে লজ্জার মুখে ফেলে দিয়েছে।রোববার দুপুরে বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, এ কারণে যাদের জন্য এ ঘটনা ঘটেছে, যে গোষ্ঠীর কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বগুড়াসহ দেশজুড়ে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল হতে হবে।বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, বগুড়ায় তরুণী ধর্ষণ ও মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে মানবাধিকার কমিশন সচেষ্ট থাকবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।তিনি বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে দেশের অধিকাংশ মামলার আসামীরা মুক্তি পায়। এর ফলে বিচার ও আইনের প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। সমাজের প্রতিটি মানুষ যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে এলে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ বিচার ও আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের কারণে দেশে এখন এসিড সন্ত্রাস সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসেছে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা গেলে অন্যান্য সামাজিক অপরাধও নির্মিূল করা সম্ভব হবে। এজন্য সকলকেই উদ্যোগী ভ‚মিকা পালন করতে হবে।কাজী রিয়াজুল হক বলেন, দেশজুড়েই নারীর প্রতি অতিমাত্রায় সহিংসতা, নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা অনেকে বেড়েছে।২০১২ সালে ঘটে যাওয়া দেশজুড়ে নারী ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে এ বছরের সাত মাসের পরিসংখ্যান চিত্রের সঙ্গে তুলনা করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ২০১২ সালে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫০৮টি। অথচ এ বছরের সাত মাসে ৫২৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওই বছরে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৫৭ জন নারী। অথচ এ বছরের সাত মাসেই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১৯টি। এই পরিসংখ্যানের বাইরেও অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। যেসব ঘটনা পুলিশ পর্যন্ত আসে না। গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় না। দেশে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ী করেন।রিয়াজুল হক বলেন, নারী নির্যাতনের মামলার ৮৮ শতাংশ এবং ধর্ষণ মামলার ৯৫ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যায়। তাহলে কি দেশে মাত্র ১২ শতাংশ নির্যাতন আর ৫ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে? তিনি বলেন, অপরাধ প্রমাণ করার ব্যর্থতার কারণে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে আসামিরা খালাস পাচ্ছে। আর বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা উৎসাহিত হচ্ছে। তাতে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। এ কারণে বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব আব্দুর রহিম, বগুড়ার সিনিয়র সহকারী জজ জেসমিন আক্তার, বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল, সিভিল সার্জন ডা. সামছুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন, সরকারি কৌসুলী (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের কৌসুলী অ্যাডভোকেট নরেশ মুখার্জ্জী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসগর তালুকদার হেনা প্রমুখ।

Share this content:

Back to top button