
এবিএনএ: গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা মাঠ ও এর আশপাশ এলাকায় তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে শনিবার ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক মুসল্লি নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। গুরুত্বর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।নিহতের নাম ইসমাইল হোসেন মণ্ডল (৭০)। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরের নিকলিয়াপাড়া এলাকার খলিল মণ্ডলের ছেলে। তিনি তাবলীগ জামাতের মাওলানা সা’দপন্থী গ্রুপের বলে জানা গেছে।
ভারতের দিল্লীর মাওলানা সা’দপন্থী তাবলীগ মুরুব্বীরা টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। এরপর গত কয়েকদিন ধরে কওমি মাদ্রাসা থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্র এসে অবস্থান নেন ইজতেমা ময়দানে। তারা সা’দ পন্থীদের মাঠ থেকে সরে যেতে বলেন। এ নিয়ে ইজতেমা মাঠে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এদিকে দুপুরে তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের হামলার ঘটনার পর বিকাল ৩টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ যৌথভাবে তাবলীগ জামাতের উভয় গ্রুপের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ইজতেমা ময়দানে এক জরুরী বৈঠক করে। বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উভয় পক্ষকে ইজতেমা ময়দান থেকে সরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। পরে উভয় পক্ষ সেই সিদ্ধান্ত মেনে বিকালের মধ্যেই ইজতেমা ময়দান থেকে তাদের অনুসারীদের সরিয়ে নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন ইজতেমা ময়দান ঘিরে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, ইজতেমা ময়দানের বিবদমান দুই পক্ষের নেতাদের নিয়ে প্রথমে ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন মিল গেইট মসজিদে পরে ইজতেমা মাঠে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে মাওলানা সা’দ পন্থীদের পক্ষ থেকে মাওলানা আশরাফ হোসেন এবং মাওলানা হাফেজ জুবায়ের পন্থীদের পক্ষ থেকে মাওলানা নূরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ইজতেমার মুরব্বি ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছরের মত এবারও তারা বিশ্ব ইজতেমা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে টঙ্গীতে জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ৩০ নভেম্বর জোড় ইজতেমায় যোগ দিতে আসা কয়েক হাজার মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে ঢুকতে গেলে মাওলানা হাফেজ জোবায়ের অনুসারী বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের বাধা দেয়। কয়েকদিন আগে থেকেই লাঠি-সোটা নিয়ে কয়েক হাজার ছাত্র ময়দানে ঢুকার ফটকগুলো বন্ধ করে দিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। ফটক দিয়ে কোন ব্যক্তিকেই তারা ঢুকতে দেননি। জোড় ইজতেমায় যোগ দিতে আসা মুসল্লিরা গত শুক্রবার ময়দানে ঢুকতে না পেরে আশপাশের মসজিদে অবস্থান নেন।

শনিবার ভোরে আবারো তারা ময়দানে ঢুকতে গেলে জোবায়ের পন্থীদের বাধার মুখে পড়েন সা’দ পন্থীরা। এ নিয়ে ওই এলাকায় মুসল্লিদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে প্রতিপক্ষের সা’দ পন্থী মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের প্রবেশ করতে চাইলে তাদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তারা লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেন। এ সময়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দূর পাল্লার যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পরীক্ষা থাকায় পরীক্ষার্থীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সা’দ পন্থী মুসল্লিরা জোরপূর্বক ইজতেমা ময়দানের প্রবেশ করতে চাইলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক মুসল্লি আহত হন। আহতদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, টঙ্গী বেসরকারি হাসপাতাল ও উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আবার অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন।

Share this content: