এ বি এন এ : বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আদালত অবমাননাকর মন্তব্য করায় সরকারের খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ বলেছেন, বিচারপতি ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দুই মন্ত্রী বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও মর্যাদাকে খাটো করেছেন। তাঁরা সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে কুৎসা রচনা করেছেন। আর এ কুৎসা রটনা ছিল উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আর এই উদ্দেশ্য প্রণোদিত মন্তব্য করে তারা আইনভঙ্গ করেছেন। সংবিধান সুরক্ষা ও সমুন্নত রাখার দায়িত্ব পালনে যে শপথ নিয়েছেন তা ভঙ্গ করেছেন এই দুই মন্ত্রী। সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের যে শপথ করেছিলেন সেটিও ভঙ্গ করেছেন।
আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতের ভিত্তিতে এ রায় দেয়া হয়েছে। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী। রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
আদালত অবমাননার দায়ে সরকারের দুই মন্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ৭দিনের কারাদণ্ড দিয়েছিল আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এই জরিমানার রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও মন্ত্রীরা শপথ ভঙ্গ করেছেন সংখ্যা গরিষ্ঠ বিচারপতির এই অভিমতের সঙ্গে একমত হতে পারেননি আপিল বিভাগের অপর তিন বিচারপতি। ঐ তিন বিচারপতি হলেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকি, বিচারপতি মো. নিজামুল হক। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকি তার অভিমতে বলেছেন, মন্ত্রীদের সাজা দেয়া ও জরিমানার সঙ্গে আমি কোন দ্বিমত পোষণ করছি না। তবে সংবিধান রক্ষায় তারা শপথ ভঙ্গ করেছেন, এর সঙ্গে একমত পোষণ করতে পারছি না। আপিল বিভাগের রুলস অনুযায়ী সংখ্যা গরিষ্ঠ বিচারপতির দেয়া রায়ই চূড়ান্ত রায় বলে গন্য হবে।
এই রায়ের ফলে এই দুই মন্ত্রী তাদের পদে থাকতে পারবেন কিনা এনিয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’ এর পরিচালক ড. স্বাধীন মালিক সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করলে কি শাস্তি হবে, সেটা কোথাও বলা নেই। আমি মনে করি শপথ ভঙ্গের জন্য তাদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।
গত ২৭ মার্চ গুরুতর আদালত অবমাননার দায়ে সরকারের এই দুই মন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের আদেশে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন। আপিল বিভাগের আদেশের পরই দুইমন্ত্রী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ও লিভার ফাউন্ডেশনে অর্থ জমা দেন।