আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

একই ভুলে মমতার কাছে আবার হারলো বিজেপি

এবিএনএ: পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি’কে একপ্রকার নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জী। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের বাঘা বাঘা নেতারা একজোট হয়ে মাঠে নেমেছিলেন তাকে হারানোর লক্ষ্যে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শেষমেশ জয়ের নৌকা ভেড়ে তৃণমূলের বন্দরেই। নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে, মমতার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক প্রচারণার কৌশল কাজে লাগেনি বিজেপির। তারা আবারও সেই একই ভুল করেছে ভবানীপুর উপ-নির্বাচনে, আর তার ফলও হয়েছে একই।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে ভবানীপুর উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এবারও মমতা জিতবেন, এটি প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু সব রেকর্ড ভেঙে এত বড় জয় পাবেন, তা হয়তো কল্পনা করেননি তৃণমূলের অনেক সমর্থক। কিন্তু ঘটেছে সেটিই। রোববার (৩ অক্টোবর) ভোটগণনার শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন তিনি। দুপুর হতে হতেই জানা যায়, রেকর্ড ৫৮ হাজার ৮৩২ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মোট ভোট পেয়েছেন ৮৪ হাজারেরও বেশি। প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি ও সিপিআইএমের প্রার্থীরা মমতার ধারেকাছেও যেতে পারেননি। তার এই বড় জয়ের কারণ কী, এখন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, বিজেপির বড় ভুল ছিল একদম শুরুতেই- প্রার্থী বাছাইয়ে। বাঙালি নারীর বিরুদ্ধে তারা দাঁড় করিয়েছিল অবাঙালি প্রার্থীকে, যা ভোটাররা সমর্থন করেননি। তার ওপর মমতা ব্যানার্জীর যে অবস্থান, তার বিপরীতে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল একপ্রকার বেমানান। বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করেছিলেন, যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্যজুড়ে।

দ্বিতীয় কারণ, কৌশল নির্ধারণে একই ভুল। ভবানীপুরেও নির্বাচনীয় প্রচারণায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নামিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। হরদীপ সিং পুরি থেকে স্মৃতি ইরানির মতো নেতারা সেখানে প্রচারণা চালান এবং মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে নানা আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। ভবানীপুরের লোকজন বিষয়টি মেনে নেয়নি। তাছাড়া বিজেপি প্রার্থীকে পুলিশের ওপর চোখ রাঙাতে দেখা গেছে। সেটাও মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। এসবের প্রভাব পড়েছে সরাসরি ভোটবাক্সে।

ভবানীপুর অঞ্চলটি নানা ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি নিয়ে গঠিত। সেখানকার মানুষ ঔদ্ধত্য পছন্দ করেন না, বরং মিলেমিশে থাকাতেই অভ্যস্ত তারা। সেখানে বাঙালি–অবাঙালি বিভেদ করা আরও বড় ভুল হয়ে দাঁড়ায় বিজেপির, যার পুরো ফায়দা পেয়েছেন ‘ঘরের মেয়ে’ মমতা। প্রচারণার সময় তিনি মসজিদ, মন্দির, গুরুদ্বার সবখানে গেছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যের বার্তা পৌঁছেছেন সবার কাছে। বিপরীতে, বিজেপির আইটি সেলের নেতা অমিত মালব্যকে বারবার হিন্দু–মুসলিম ভেদাভেদ নিয়ে টুইট করতে দেখা যায়, যা ছিল কফিনের শেষ পেরেক। এই জয়ের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ধরে রাখার পাশাপাশি ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করলেন মমতা ব্যানার্জী। জনসমর্থনের এই ধারা অব্যাহত রেখে আগামী লোকসভা নির্বাচনে তিনি সত্যিই নরেন্দ্র মোদীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন কিনা, এখন সেটিই দেখার বিষয়।

Share this content:

Back to top button