আইন ও আদালতবাংলাদেশলিড নিউজ

আলবদর নেতা মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল

এ বি এন এ : একাত্তরের গুপ্তঘাতক কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির সাজাই বহাল রইল।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেমের করা আবেদন আজ মঙ্গলবার খারিজ করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সকালে এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, রিভিউ আবেদনটি খারিজ করা হলো। রায় ঘোষণার সময় এজলাসকক্ষ ছিল পরিপূর্ণ।

মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল থাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের উল্লাস। ছবি: আবদুস সালামমীর কাসেমের আইনি লড়াইয়ে রিভিউ আবেদনই ছিল শেষ ধাপ। এই আবেদন খারিজ হওয়ায় এখন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না।
মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের ওপর গত রোববার শুনানি শেষ হয়। এরপর ৩০ আগস্ট (আজ) আদেশের তারিখ রাখেন আপিল বিভাগ।

রায় ঘোষণা উপলক্ষে আজ সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুটি অভিযোগে মীর কাসেমের ফাঁসি ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম।

চলতি বছরের ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। অন্য ছয়টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে তাঁর কারাদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

মীর কাসেমের রায় উপলক্ষে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তল্লাশি চলছে। ছবি: আবদুস সালামআপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৬ জুন প্রকাশিত হয়। ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম। তাঁর আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়।

মীর কাসেম আলীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।

জামায়াত নেতা মীর কাসেম দলটির অর্থের জোগানদাতা হিসেবে বেশি পরিচিত। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধের ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও তিনি যুক্ত বলে অভিযোগ আছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতের এই নেতা ১৯৭১ সালে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন কুখ্যাত গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান।

আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার। ছবি: আবদুস সালামমীর কাসেমের নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা এলাকার ডালিম হোটেলে স্থাপিত হয় আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প ও নির্যাতনকেন্দ্র।

একাত্তরে চট্টগ্রামে এই ডালিম হোটেলকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতো সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ, যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন মীর কাসেম। এর ফলে ডালিম হোটেল মানুষের কাছে পরিচিতি পায় ‘হত্যাপুরী’ হিসেবে। আর নৃশংসতার জন্য মীর কাসেমের পরিচয় হয় ‘বাঙালি খান’।

Share this content:

Back to top button