
এ বি এন এ : বজ্রপ্রাতে গত দুই দিনে সারা দেশে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৪০ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর শুক্রবার রাত ১১টা পর্যন্ত আরও ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বজ্রপাতে নিহতদের মধ্যে সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমীনের চাচাতো ভাইও রয়েছেন।
এছাড়া আহত বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
শুক্রবার ঢাকার সাভার ও ধামরাইয়ে ২ জন, চট্টগ্রামে সাবেক প্রাথমিক গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমীনের চাচাতো ভাই আমজাদ আলী বজ্রপাতে প্রাণ হারান।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় শুক্রবার দুপুরে বজ্রপাতে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার সতীঘাটা ও ক্ষেতলাল উপজেলার হাওয়ার বিল (বিলের ঘাট) এলাকায় জমির পাকা ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতের দুই ক্ষেত মজুরের মৃত্যু হয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও কালুখালীতে বজ্রাপাতে তিন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা রেল স্টেশনে বজ্রপাতে বান্টি নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
চাঁদপুরের মেঘনা মোহনায় মালবাহী ট্রলারে বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের গজিন্দ্রপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে লাল চাঁন (২৮) নামে এক গার্মেন্টসকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাগ গ্রামে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নওগাঁর পোরশা ও মহাদেবপুরে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে, এছাড়া সিরাজগঞ্জের উল্পাপাড়ায় বজ্রপাতে ২ জন মারা গেছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খোদ্দমালিবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামে শুক্রবার সকালে বজ্রপাতে সিরাজুল হক ও মাগুরা সদর উপজেলার কাপাসহাটী বিকালে বজ্রপাতে তুহিন শেখ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের কলকলি ইউনিয়নে বজ্রপাতে আমির উদ্দিন নামে এক যুবক ও গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বজ্রপাতে সুভাষ চন্দ্র নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
যশোর শহরতলীর সুজলপুরে বজ্রপাতে ইয়ার আলী (৭০) নামে বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৬৫)। শুক্রবার বিকালে নিহত ইয়ার আলী ওই গ্রামের মৃত আবদুল হক মোল্যার ছেলে।
নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় বজ্রপাতে ছায়া রানী রায় (৪৫) ও প্রতাপ রায় (১৭) নামে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বজ্রপাতে অন্তত ৪০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া বজ্রপাতে গত দুই দিনে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে বজ্রপাত বা এ ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতিকে নানাভাবে অতিমাত্রায় বৈরী করে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি মুঠোফোনের ব্যবহার এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন এর জন্য দায়ী।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছ ধ্বংস হওয়ায় দেশে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।
বিশেষ করে বর্ষা আসার আগের মে মাসে তাপমাত্রা বেশি হারে বাড়ছে। এতে এই সময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রঝড় সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তবে এটাকে মোকাবিলা করা সম্ভব। এজন্য প্রকৃতির প্রতি সুবিচার করতে হবে। গ্রিনহাউস মোকাবেলায় পরিবেশবান্ধব শিল্প ও নগর নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় জলাশয় ও বনভূমি বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলেই বজ্রপাতকে মোকাবিলা করা সম্ভব।
বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ ড. আবদুুল মান্নান বলেন, বজ্রপাতের সময় পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নেয়া উচিত। বারান্দায় না থাকা। ঘরের জানালা থেকে দূরে থাকা। এ সময় জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতরে থাকা উচিত। ভবনে যথাযথ বজ্র নিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করা। উঁচু জায়গায় অবস্থান না নেয়া। উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকা। ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলা। টিভি-ফ্রিজ না ধরা। গাড়ির ভেতর অবস্থান না করা। খালি পায়ে না থাকা। ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে খোলা বা উঁচু জায়গায় না থাকা। ফাঁকা জায়গায় যাত্রী ছাউনি বা বড় গাছে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। জলাশয়ের পাশে না থাকা। মাছ ধরা বন্ধ রাখা। নৌকায় থাকলে নৌকার ভেতরে অবস্থান নেয়া। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সব সময় পরিবাহি খোঁজে। তাই বজ্রপাতের সময় সেটি মাটি পর্যন্ত পৌঁছাতে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটি ও টাওয়ার জাতীয় কিছুতে পড়ার আশঙ্কা বেশি। তাই বজ্রপাতের সময় উঁচু গাছ বা খুঁটির কাছাকাছি থাকা নিরাপদ নয়। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ না করা। এমনকি ল্যান্ড ফোন ব্যবহার না করা। বজ্রপাতের আভাস পেলে আগেই বিদ্যুতের প্লাগ খুলে রাখা ভালো। প্রচণ্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টির সময় গাড়ি বারান্দা বা পাকা ছাউনির নিচে রাখা যেতে পারে। এ সময় গাড়ির কাঁচে হাত দেয়াও বিপজ্জনক। – See more at: http://www.jugantor.com/online/national/2016/05/14/12879/%E0%A6%AC%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A7%AC%E0%A7%AA-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF#sthash.3AoBHGld.dpuf
Share this content: