৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে বিভক্ত আদেশ

এবিএনএ : রাজনৈতিক দল থেকে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার কারণে সংসদীয় আসন শূন্য হওয়া সংক্রান্ত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে করা রিটে বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি প্রশ্নে এই বিভক্ত আদেশ দেন। আদেশে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রশ্নে রুল জারি করেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। রুলে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। অন্যদিকে রিট আবেদনটি খারিজ করেন বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। এর ফলে রিট আবেদনটি অনিষ্পন্ন হওয়ায় বিধি অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনার জন্য ওই বেঞ্চ থেকে মামলার সকল নথিপত্র শিগগিরই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে।
সংশ্নিষ্ট আইনজীবীরা জানান, নথিপত্রসহ রিট আবেদনটি এখন বিধি অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে। তিনি এর জন্য একটি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। ওই বেঞ্চের আদেশ অনুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। আদেশের পর মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের সংশ্নিষ্ট বেঞ্চ থেকে রিট আবেদনটি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে পাঠানো হবে। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রিট আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য যে বেঞ্চ গঠন করে দেবেন সেখানেই এর পরবর্তী শুনানি হবে।
গত বছরে ১৭ এপ্রিল সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে অগতান্ত্রিক দাবি করে তা বাতিলের জন্য হাইকোর্টে এ রিটটি দায়ের করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রিটে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ একই সংবিধানের অন্যান্য অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে তা বাতিলের জন্যও রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জাতীয় সংসদের স্পিকারকে বিবাদী করা হয়। রিটে বলা হয়, একজন সাংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্ত সংসদে তিনি তার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট বা নিজস্ব মতামত দিতে পারেন না। কারণ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট দিলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। অথচ সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গণতন্ত্র হচ্ছে মৌল কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। ফলে ৭০ অনুচ্ছেদটি অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক মুল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শুন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’
Share this content: