এবিএনএ : ৫৭৫ দিনের প্রচারণা। ২১০ কোটি ডলার ব্যয়। ডজন ডজন স্ক্যান্ডালের ছড়াছড়ি। সবকিছু একদিনে মিশে যাচ্ছে। এ দিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিন। আজ মঙ্গলবার মার্কিনিরা সেই মহা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জানান দিচ্ছেন। তারা তাদের ভোটের শক্তি দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন হিলারি ক্লিনটন নাকি ডনাল্ড ট্রাম্পের হাতে হোয়াইট হাউজের চাবি তুলে দেবেন। ২০১৫ সালের ১২ই এপ্রিল হিলারি ঘোষণা করেছিলেন দীর্ঘদিন মনের গভীরে লুকিয়ে রাখা একটি কথা। আনুষ্ঠানিকভাবে বলেই দিয়েছিলেন দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউজের জন্য লড়াই করবেন তিনি। সেদিন তিনি রোববার সন্ধ্যায় এক ভিডিওতে বলেছিলেন, প্রতিদিন আমেরিকানদের প্রয়োজন একজন চ্যাম্পিয়ন। আমিই সেই চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।
তারপর থেকে কেটে গেছে ১৮ মাস। এরই মধ্যে হিলারি কঠিন এক প্রাইমারি নির্বাচনের মুখোমুখি হয়েছেন। তাতে উৎরে গেছেন। তারপর পড়েছেন রিপাবলিকান দলের আগ্রাসী প্রতিদ্বন্দ্বী ডনাল্ড ট্রাম্পের মুখে। হিলারির স্টামিনা বা কর্মশক্তি, তার স্বাস্থ্য, এমনকি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রার্থিতার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। এমন সব আক্রমণে হিলারি ভেঙে পড়েন নি। তিনি নিজেকে সংবরণ করে নিয়েছেন।
শীতের এক সোমবার রাতে হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রচারণার বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি সেই প্রচারণার ইতি টানেন ফিলাডেলফিয়ায়। এই সেই শহর যেখানে যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছিল। এ সময় হিলারির পাশে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা, হিলারির স্বামী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, মেয়ে চেলসি ক্লিনটন, ব্রুস স্প্রিংস্টিন ও জোন বন জোভি। ঐতিহাসিক সেই ফিলাডেলফিয়ায় উত্তাল মানুষের ¯্রােতের সামনে দাঁড়িয়ে স্প্রিয়স্টিন উদাত্ত আহ্বান জানালেন, ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসুন। ভোট দিতে যান। এ সময় জনপ্রিয় এ সঙ্গীতশিল্পী পরিবেশন করেন ‘থান্ডার রোড’ ও ‘ড্যান্সিং দ্য ডার্ক’। নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে শেষ দিনগুলোতে ভাল একটি লিড নিতে পেরেছেন তিনি। ওয়াশিংটন পোস্ট-এবিসি নিউজের জরিপে হিলারিকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৭ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন ৪৩ ভাগ। অন্যদিকে সিবিএস নিউজের জরিপে হিলারিকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৫ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে শতকরা ৪১ ভাগ। তবে এসব জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে মত পরিবর্তন করবেন এমন ভোটারের সংখ্যা নেই বললেই চলে।
প্রায় ২০ হাজার মানুষের উপস্থিতি ফিলাডেলফিয়ায়। রাতের ঘুম নষ্ট করে তারা সমবেত হয়েছেন এসব গুণী ব্যক্তির কথা শোনার জন্য। সেখানে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষরের কথা স্মরণ করে বিল ক্লিনটন বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের সূচনা হয়েছিল এখান থেকেই। এই ফিলাডেলফিয়া থেকেই। তিনি বললেন, আমার স্ত্রী তার প্রচারণার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন এই দেশ কিভাবে এগিয়ে যাবে। আমরা একত্রিত হলে আরো উন্নততর উপায়ে এগিয়ে যাবো। ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামার বক্তব্যের পর মঞ্চে আসেন বিল ক্লিনটন। এবার নির্বাচনী প্রচারণায় হিলারি ক্লিনটনের কার্যকর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রচারণায় পরিণত হয়েছিলেন এই মিশেল ওবামা। মিশেল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একজন নেতা দাবি করে, যিনি আমাদের কন্যাদের সম্মান জানাবেন। সবার মর্যাদা স্বীকার করবেন। আমরা যদি নির্বাচনের দিনে ঘরের বাইরে বের হই তাহলে নির্বাচনে বিজয়ী হবেন হিলারি ক্লিনটন। তারপরই মঞ্চে আসেন তুখোড় বক্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি টানা ২০ মিনিট প্রাণখোলা কথা বলেন। কখনও আবেগ তাকে স্পর্শ করে। এ সময়ও ডনাল্ড ট্রাম্পকে দেশের প্রেসিডেন্ট পদে অযোগ্য ঘোষণা করেন তিনি। ওবামা বলেন, হিলারিকে সম্মান করে সারাবিশ্ব। এক সময় ওবামার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। আবেগ তাকে তাড়া করে ফেরে। তিনি সে অবস্থায় বললেন, আমি এই নারী, এই মা, এই গ্রান্ডমাদারের জন্য আপনাদের কাছে ভোট চাই। তিনিই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্টের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। হিলারি বলেন, শেষ এই নির্বাচনী র্যালিতে বেরিয়ে আসার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমার স্বামী, কন্যাকে পাশে রেখে এই নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করতে পেরে ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত। আমরা সারাদেশ ঘুরেছি। সাক্ষাত করেছি মানুষের সঙ্গে। হিলারি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাই তাহলে সবচেয়ে সেরাদিন আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে।