কোনো দল নির্বাচন না আসলে নির্বাচন থেমে থাকবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন ছাড়া বিএনপির কোনো বিকল্প নেই। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায় ছাত্রলীগের স্টল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা (বিএনপি) নির্বাচনে আসুক, কারণ নির্বাচন ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই। সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তারা না আসলে কিছু থেমে থাকবে না।’
বিএনপির পদযাত্রায় ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ। সংঘাতের সম্ভাবনা আছে। সংঘাত হলে এর দায় কে নেবে- এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের পদযাত্রাই হচ্ছে উস্কানি। সিরাজগঞ্জের ১৮টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে তারা। আগুন সন্ত্রাস বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় করতে পারে। এজন্য আমরা জনগণের জানমাল রক্ষায়, যেহেতু সরকারে আছি; তাই জনগণের কাছে ওয়াদা অনুযায়ী আমরা দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও দায়িত্ব আছে। আমরা তো তাদের পাল্টাপাল্টি কোনো সমাবেশ দেয়নি’।
‘আমরা সংঘাত চাই না, প্রতিযোগিতা চাই। রাজনীতি এবং নির্বাচনেও প্রতিযোগিতা চাই। অতীতে আন্দোলনের নামে তারা যা করেছে! কতো মানুষ পুড়িয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর করেছে, রেললাইন রেল পুড়িয়েছে, বিদ্যুৎ স্টেশন পুড়িয়েছে, ভূমি অফিস পুড়িয়েছে, সিএনজিচালকও রেহাই পায়নি। চৌদ্দগ্রামে মধ্যরাতে নিরীহ যাত্রীদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তো এটা তো তারাই করে। আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা তো শান্তি চাইবোই। দেশে বিশৃঙ্খলা হলে এটা তো আমাদেরই ক্ষতি। আমরা গায়ে পড়ে কেন বিশৃঙ্খলা ডেকে আনবো।’
বিএনপি আন্দোলনে সফল না হলে এখন সংঘাতের দিকে যেতে চায় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কারণ তারা তো বলেছিলো ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়া দেশ চালাবেন, তারেক রহমান এসে হাল ধরবেন। তাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পছন্দ হয়নি, তারা চলে গেছে গোলাপবাগের গরুর হাটে। তো আন্দোলনের দশা কী? আন্দোলন ওখানে গিয়ে গুরুতর জখম। সেই আন্দোলন এখন সেই অবস্থা থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে পথ হারিয়ে দিশেহারা বিএনপি এখন পদযাত্রা।
‘বিএনপি সহিংস আন্দোলনের অতীত আছে। তারই পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টি এখানে রয়েছে। কাজেই আমরা প্রস্তুত, আমাদের কর্মসূচি শুধু শান্তি-সমাবেশ না। আমাদের গণসংযোগ আছে, সদস্য সংগ্রহ অভিযান আছে। সম্মেলন আছে। যে সম্মেলন করতে বিএনপি ভুলেই গেছে। তারা ঘরেই গণতন্ত্রের চর্চা করে না। তারা দেশে গণতন্ত্র চায় না। তারা চায় একটা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চোরাগলি দিয়ে অন্ধকারের ক্ষমতায় যেতে।’
সংলাপের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার কথা বাবা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের রাষ্ট্রপতি যখন উদ্যোগ নেন, তারা তখন তা প্রত্যাখ্যান করে। এই নির্বাচন কমিশন অন্যটির মতো নয়। এই কমিশন নির্বাচিত হয়েছে সংসদে আইনের দ্বারা। নির্বাচন কমিশন করতে প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা সেটি তিনি আইনের ওপর ন্যস্ত করেছেন। আইনি প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন হয়েছে। বেগম জিয়া নির্বাচন কমিশনার বানিয়েছিলেন তার দলের লোক আজিজকে দিয়ে। দলের লোককে বানানোর জন্য এম এ হাসানকে দু’বছরের রিটার্নমেন্ট বাড়িয়েছিলেন।’
বেগম জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়ার কারাদণ্ড আছে। এই অবস্থানটা তার নির্বাচন করার পক্ষে নয়। তিনি নির্বাচন করার জন্য যোগ্য না। তবে তিনি বিএনপির নেতা হিসেবে তিনি যদি রাজনীতি করতে চান, সেক্ষেত্রে যে শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে; সেটি মেনে তাকে করতে হবে। নো ওয়ে।’
‘বিএনপি বলছে, সরকার চাপে আছে’। কোনো চাপ অনুভব করছেন কিনা- জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘তারা একসময় একেক জন বিদেশিদের ওপর ভর করে। সকাল বেলায় ওঠেই নালিশ করতে যায়। হাই-কমিশনগুলোতে নালিশ করতে যায়। এজন্য মানুষ এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টি বলে বিএনপিকে।’
‘বিদেশিদের চাপ কেন আমাদের ওপর হবে? তারা আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে, আমাদের দেশের গণতন্ত্র আমরা চালাই। আমরা গণতন্ত্রের রীতিনীতি মানছি কিনা, বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবে। আমরা স্বাগত জানিয়েছি। তারা আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। চাপে তো আছে বিএনপি।’
বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ না পেয়ে বিএনপি হতাশ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডোলাল্ড লু এসেছিলো। বিএনপি ভেবেছিল, তাদের সাথে বসবে। সেটা কী হলো? এখন আমেরিকার প্রতিনিধির সঙ্গে অন্তরঙ্গ বৈঠকের সুযোগ না পাওয়ায়, নালিশের সুযোগ না পাওয়ায়, বিএনপি আজকে হতাশ। আমরা সংবিধান অনুযায়ী চলছি।’ এসময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত উপস্থিত ছিলেন।