আইন ও আদালতলিড নিউজ

কারাগার নয়, ৭০ শিশুকে মা-বাবার জিম্মায় পাঠালেন আদালত

এবিএনএ: সুনামগঞ্জে ৫০ মামলায় লঘু অপরাধে অভিযুক্ত ৭০ শিশুকে কারাগারে না পাঠিয়ে ছয় শর্তে সংশোধনের জন্য মা-বাবার জিম্মায় দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দিয়েছেন। মারামারি ও মাদক বহনসহ লঘু অপরাধের ৫০ মামলায় ৭০ শিশুকে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে জড়ানো হয়েছিল। এসব শিশুদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হত। এ কারণে শিশুদের ভবিষ্যত ও শিক্ষা জীবন ব্যাহত হচ্ছিল। শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার এই অসুবিধা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে সকল মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

আদালতের দেওয়া ছয় শর্তে বলা হয়েছে, এসব শিশুদেরকে প্রতিদিন দুইটি ভাল কাজ করে আদালতের দেওয়া ডায়েরিতে লিখে রাখতে হবে এবং বছর শেষে ডায়েরি আদালতে জমা দিতে হবে, মা-বাবা ও গুরুজনদের আদেশ মানতে হবে, তাদের সেবাযত্ন ও কাজে সাহায্য করতে হবে, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও ধর্ম-কর্ম করতে হব, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা ও ভবিষ্যতে অপরাধের সাথে না জড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে সকল শিশুর হাতে ফুল তুলে দেন আদালতের কর্মীরা। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সুনামগঞ্জ শিশু ও মানব পাচার আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট হাসান মাহবুব সাদী।

হাসান মাহবুব সাদী বললেন, সুনামগঞ্জের শিশু আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. জাকির হোসেন যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। ৫০ টি মামলায় ৭০ জন শিশুকে তাদের মা-বাবার জিম্মায় শর্ত সাপেক্ষে পাঠিয়েছেন। শর্তগুলো পালনের মাধ্যমে শিশুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। তাদেরকে আর আসামি হিসেবে কোর্টে আসতে হবে না। রায় ঘোষণার সময় শিশুদের মা-বাবা ও স্বজনরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আইনজীবীরা বললেন, শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেল, মা-বাবার দুঃশ্চিন্তার অবসান হল এবং সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেল। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আইনুল ইসলাম বাবলু বললেন, বিজ্ঞ আদালতের রায়ে শিশুরা সংশোধিত হবার সুযোগ পেল। অপরাধ করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসবে তারা। সাধারণত আমরা দেখি শিশুরা কারাগারে থাকলে অন্য অপরাধীদের সাথে মিশে আরো অপরাধী হয়ে যায়। আদালত তাদের কারাগারে না পাটিয়ে বাবা মায়ের জিম্মায় দেওয়ায় অপরাধ করা থেকে বিরত থাকবে তারা।

অ্যাডভোকেট মতিয়া বেগম এই রায়কে চমৎকার উল্লেখ করে বললেন, অপরাধের সঙ্গে শিশুরা যাতে আর জড়িত না হয়, সেই ইচ্ছা থেকেই হয়তো আদালত এই রায় দিয়েছেন। পরিবারে ফিরে যাওয়া শিশুরা আদালতের আদেশ সঠিকভাবে প্রতিপালন করছেন কি না তা তিন মাস পর পর একবছর পর্যবেক্ষণ করবেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. সফিউর রহমান।

সফিউর রহমান বলেন,’আদালত ৫০ মামলায় ৭০ অভিযুক্ত শিশুকে ছয় শর্তে প্রবেশনে এক বছরের জন্য মুক্তি দিয়েছেন। আদালতের শর্ত ঠিকমত প্রতিপালন করছে কি না তা দেখে আদালতে রিপোর্ট জমা দেবার দায়িত্ব আমার। আমি সেটি পালন করার চেষ্টা করবো এবং শিশুরা যাতে সংশোধিত হয় সেইভাবেই দায়িত্ব পালন করবো আমি।’

Share this content:

Related Articles

Back to top button