জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

বড়পুকুরিয়া পরিদর্শনে উচ্চপর্যায়ের ৪ কর্মকর্তা কয়লা চুরি হলে তাদের মাধ্যমেই হয়েছে: জ্বালানি সচিব

এবিএনএ: বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লা চুরির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে কয়লা খনিতে উৎপাদন শুরু হবে। আর তার আগেই বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে বড়পুকুরিয়া পরিদর্শনে আসা উচ্চপর্যায়ের ৪ কর্মকর্তা এসব কথা বলেন। তারা শুক্রবার সকালে বড়পুকুরিয়া পরিদর্শনে আসেন। এ দলে ছিলেন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমদ কায়কাউস, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ ও পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ। জানা গেছে, উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রশাসনিক এলাকায় কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠকও করেন। বৈঠকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমদ কায়কাউস তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের আগামী ঈদের ছুটি না কাটানোর আহ্বান জানান।তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিকল্প উপায়ে যে কোনো সময় চালুর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ জন্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিতে না যাওয়ার আহ্বান জানা তিনি। বৈঠক ও পরিদর্শন শেষে আহমদ কায়কাউস জানান, বাংলাদেশের যা বিদ্যুৎ-চাহিদা তা পূরণ করার মতো দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন রয়েছে। তবে দূরবর্তী হওয়ার কারণে ভোল্টেজ ব্যালেন্স সমস্যা হচ্ছে। ৮টি জেলায় ১০০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। তাই এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া সিরাজগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমানো হয়েছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানান, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কয়লার যা মজুদ থাকার কথা ছিল, তা নেই। সেটা যে কোনোভাবেই হোক লোপাট হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা থানায় মামলা করেছি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি এটা একটা সিকিউরড এলাকা, এখানে বাইরের লোক ঢুকতে পারে না। এখানে যদি কয়লা না থাকে, তাহলে যারা কোল মাইনের দায়িত্বে আছে, দায়দায়িত্ব তাদেরকেই বহন করতে হবে। চুরি বা লোপাট হলে, তা তাদের মাধ্যমেই হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোল মাইনের লোকজন বলছে- কয়লা ঘাটতির ঘটনাটি সিস্টেম লস। এটা আমরা বিশ্বাস করিনি। এটা বিশ্বাস করাতে হলে প্রমাণ দিয়ে বিশ্বাস করাতে হবে। সেজন্য আমরা ছাড়াও দুদক থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া মামলাও হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে কয়লা লোপাটের বিষয়টি প্রমাণ হলে যারা খনির দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা হবে। হঠাৎ কয়লা লোপাট হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি সচিব বলেন, তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে, সেই কয়লা বিক্রি হয়েছিল কিনা? বিক্রি হলে টাকা কোথায়? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, মাইন ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে। ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কয়লা উৎপাদন শুরু হবে। তখন আমরা পিডিবিকে কয়লা সরবরাহ করতে পারব। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো, ফয়জুল্লাহ জানান, কয়লা চুরি করে যারা কষ্টের সম্মুখীন করেছেন তাদের বিষয়টি কোনোভাবেই হালকা করে দেখার উপায় নেই। চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে যাতে করে দ্রুত কয়লা উৎপাদন শুরু হয়। দ্রুত কয়লা উৎপাদনে যেতে তারা রাজি হয়েছেন এবং দ্রুত কাজ করার কথা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে চীন ও স্থানীয় শ্রমিকরা তাদের ছুটি পালন করবেন না বলে জানিয়েছেন। দ্রুত কয়লা উৎপাদনের পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকেই খনির কয়লা উত্তোলন শুরু হবে। জানা গেছে, একটি ফেস থেকে নতুন ফেসে যন্ত্রপাতি স্থানান্তরের জন্য ১৬ জুন থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পুনরায় কয়লা উত্তোলন শুরু হবে আগস্ট মাসের শেষের দিকে। এ সময়ের মধ্যে পাশের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কয়লার মজুদ রয়েছে বলে ২০ জুন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) নিশ্চিত করে খনি কর্তৃপক্ষ। খনি কর্তৃপক্ষ পিডিবিকে নিশ্চিত করে খনির কোল ইয়ার্ডে ১ লাখ ৮০ হাজার টন কয়লা মজুদ রয়েছে। মজুদ এ কয়লা দিয়ে আগস্ট মাস পর্যন্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সচল রাখা যাবে। কিন্তু জুলাই মাসের শুরু থেকেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে হঠাৎ কয়লার সরবরাহ কমিয়ে দেয় খনি কর্তৃপক্ষ। কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় রোববার থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় খনি কর্তৃপক্ষ। ফলে কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়ায় পেট্রোবাংলা ও খনি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় পেট্রোবাংলা এক অফিস আদেশে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এছাড়াও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দফতরে সংযুক্ত করা হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা গায়েবের ঘটনায় খনির সদ্য অপসারণকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদসহ ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান মঙ্গলবার রাত ১২টায় বাদী হয়ে পার্বতীপুর মডেল থানায় এ মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ফখরুল ইসলাম।

Share this content:

Back to top button