আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

সৌদিতেও ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস, হজ নিয়ে শঙ্কা!

এবিএনএ : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সৌদি আরব এরই মধ্যে ওমরাহ পালন ও মসজিদে নববী জিয়ারতে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। করোনাভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য সতর্কতা হিসেবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে সৌদি আরবে ৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আসন্ন হজ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আসন্ন হজ বাতিল করতে পারে সৌদি আরব। হজের সময় ইসলাম ধর্মের পবিত্র স্থান মক্কা ও মদিনাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। অধিক লোকসমাগমের কারণে এসময় করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার মারাত্মক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে হজ বাতিলের এই সম্ভাবনা মুসলিম বিশ্বে কেমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে সেটা নিয়েই সৌদি কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হচ্ছে। এছাড়া বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টিও সামনে চলে আসছে। করোনার প্রভাবে এরই মধ্যে তেলের দাম কমে যাওয়া ও ওমরাহ পালনে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে দেশটি। করোনাভাইরাস সৌদি আরবকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়াসমিন ফারুক। তিনি বলেন, ‘হজ বাতিল করলে সেটা সৌদির সমালোচক এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে উঠবে। তারা এটাকে পুঁজি করে ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলোর ওপর সৌদি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে।’

নিউজিল্যান্ডের গ্র্যান্ড মুফতি থেকে শুরু করে মালয়েশিয়া এবং এর বাইরেও ইসলামিক সংস্থাগুলোর একাধিক ব্যক্তি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, সৌদির এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে রাজনীতি করা হতে পারে এবং এটাকে সৌদিকে ঘায়েল করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। বিশেষ করে ইরান এবং তার মিত্ররা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। সৌদিপন্থী পর্যবেক্ষকরা এই ভাইরাসটিকে কাতার বা ইরানের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা নিয়ে অনেক হাস্যরস ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, একজন ইরানি ওমরাহ পালনকারীর মাধ্যমে সৌদি আরবে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস ছিল। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, করোনা ইস্যুতে আবারও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সৌদি আরব। সৌদি সরকার ও আলেমরা যখন ভাইরাসটি যাতে পবিত্র স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তখন শিয়া ওমরাহ পালনকারীর মাধ্যমে করোনা ছড়িয়েছে এমন অভিযোগ আগুনে ঘি ঢালতে পারে।

লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের একজন পরিদর্শন সহযোগী উমর করিম এএফপিকে বলেছেন, “সৌদি আরব নিজেকে ইরানের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই সিদ্ধান্তটি হজ ও দুই পবিত্র নগরীর একমাত্র কর্তৃত্ব সৌদি আরবের হাতে থাকা উচিত কি-না তা নিয়ে মুসলিম বিশ্বে রাজনৈতিক বিতর্ককে পুনরায় উজ্জীবিত করতে পারে।” গত সপ্তাহেই বিদেশি নাগরিকদের জন্য মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ পালন ও ধর্মীয় সব কর্মকাণ্ড বন্ধের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। ওমরাহ হজ করার জন্য জমা নেওয়া অর্থ এজেন্সির মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। এছাড়া পর্যটন ভিসা থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে এমন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সৌদি আরবে প্রবেশ না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে দেশগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাময়িকভাবে এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে কতদিন এসব নিষেধাজ্ঞা ও স্থগিতাদেশ থাকবে, সেটি বলা হয়নি। গত সোমবার কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগী পাওয়া ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। ওই নাগরিক কিছুদিন আগে ইরান ভ্রমণ করেছিলেন।

Share this content:

Back to top button