
এবিএনএ: মূল অনুষ্ঠান শুরু হতে এখনো বাকি। এর আগেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সংবর্ধনাস্থল ও আশপাশের ফাঁকা এলাকা এখন লোকে লোকারণ্য। ছোট ছোট মিছিল এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে অবস্থান করছে। চেকপোস্ট পেরিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা এখন সমাবেশস্থলে প্রবেশের অপেক্ষায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে সংবর্ধনাস্থলে এসে পৌঁছাবেন বলে আশা করা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই সংবর্ধনাস্থলে পৌঁছে গেছেন। বেলা দুইটায় সংবর্ধনার মূল অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১১টার পর থেকেই মিছিল আসা শুরু হয়েছে সংবর্ধনাস্থলে। পিকআপ নিয়ে মিছিল করে নেতা-কর্মীরা ঢুকছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সকাল থেকেই কোনো বাস ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কাঁটাবন দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সমাবেশে যেসব গাড়ি আসছে, সেগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে মল চত্বরে। বাংলামোটর এলাকায় ডাইভারশন দেওয়ার কথা থাকলেও সকালে রাস্তায় যানজট কম থাকায় সেখানে ডাইভারশন দেওয়া হয়নি। দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকেই সংবর্ধনাস্থলের আশপাশের প্রায় সব সড়কে ডাইভারশন দেওয়া হয়। বেলা একটার পর থেকে ভিআইপি রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, পল্টন, মৎস্য ভবন এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় যানজট দেখা দেয়।
শাহবাগের ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. সারোয়ার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বলেন, এখন পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যানজট হয়নি। তবে দুপুরের পর কিছু সড়ক বন্ধ হলে যানজট দেখা দিতে পারে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ব্যক্তিগত যানবাহন অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ কম। ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ গাবতলীতে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গাবতলী জোনের ট্রাফিকের সহকারী কমিশনার সাইফুল ইসলাম মজুমদার বলেন, রাস্তা আজ অনেকটা ফাঁকা। আর মানুষ আগে থেকে সমাবেশের বিষয়টি জানার জন্য বিকল্প পথেই চলাচল করছেন।
আগারগাঁও চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে দেখা হয়, মাসুদুর রহমান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মী জানান, মাকে নিয়ে ধানমন্ডি তিন নম্বর সড়কে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দুপুর পৌনে ১২টায়। ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাতের নির্ধারিত সময় বেলা তিনটায়। তবে রাস্তায় যানজট শুরু হবে, এই ভয়ে তিনি আগেই বেরিয়েছেন। রাস্তা ফাঁকা দেখে তিনি খানিকটা অপ্রস্তুত। এখন ঠিক করেছেন, ধানমন্ডিতে বোনের বাসায় থাকবেন। পরে চিকিৎসকের কাছে যাবেন।
শাহবাগ এলাকায় ছোট ছোট মিছিলে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা গেছে। এসব ব্যানারে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে নানা অর্জনের কথা তুলে ধরা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জনতার ঢল। ছবিটি বাংলা একাডেমির সামনে থেকে তোলা। ছবি: সাইফুল ইসলামমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, কলকাতা থেকে ডি-লিট উপাধি পাওয়াসহ নানা সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ শনিবার গণসংবর্ধনা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এ সমাবেশ উপলক্ষে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের এলাকা থেকে পরিবহনযোগে ও হেঁটে অসংখ্য নেতা-কর্মী, বিশিষ্ট ব্যক্তি, পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হচ্ছেন। এই সমাবেশে উপলক্ষে ব্যাপক শোডাউন করছে আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই গণসংবর্ধনা হবে ঐতিহাসিক, যার প্রকাশ ঘটবে শনিবার।
দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এ সময়ে এই অর্জন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য অর্জিত হয়েছে। এটা তো অভূতপূর্ব সাফল্য। সে কারণে এ সংবর্ধনা। কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষ থেকে আমরা স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী জাতির জনকের কন্যাকে সংবর্ধনা দিচ্ছি। আর লোকসমাগমের বিষয়টা আপনাদের ক্যামেরাই বলে দেবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, এই গণসংবর্ধনা উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকের রাস্তায় সকাল থেকেই যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এর আগে ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আজ বেলা একটা থেকে অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন, টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর রাস্তা বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে বাংলামোটর, কাকরাইল চার্চ, ইউবিএল, জিরো পয়েন্ট, গোলাপ শাহ মাজার, চানখাঁরপুল, বকশীবাজার, পলাশী, নীলক্ষেত, কাঁটাবন ক্রসিং দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়মুখী সাধারণ গাড়িগুলোকে ডাইভারশন দেওয়া হতে পারে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুষ্ঠান উপলক্ষে মিরপুর থেকে আসা দলীয় নেতা-কর্মী বাসে এলে গাড়ি মিরপুর রোড দিয়ে এসে নীলক্ষেত এলাকায় পার্ক করবেন। উত্তরা, মহাখালীর দিক দিয়ে যেসব নেতা-কর্মী বাসে আসবেন, তাঁরা গাড়ি মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-নাইটিঙ্গেল-ইউবিএল-জিরো পয়েন্ট-হাইকোর্ট হয়ে দোয়েল চত্বরে নামিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়ামে পার্ক করবেন। ফার্মগেট-সোনারগাঁও-শাহবাগ হয়ে যেসব নেতা-কর্মী বাসে আসবেন, সেসব গাড়ি টিএসসি রাইট টার্ন করে মল চত্বরে পার্ক করবেন। যাত্রাবাড়ী, ওয়ারী, বংশাল দিয়ে যাঁরা আসবেন, তাঁরা গাড়ি জিরো পয়েন্ট, হাইকোর্ট হয়ে দোয়েল চত্বরে নামিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়ামে পার্ক করবেন। লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর থেকে আগত নেতা-কর্মীদের গাড়ি পলাশী-নীলক্ষেত এলাকায় পার্ক করবেন।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বেলা তিনটায় গণসংবর্ধনা শুরু হলেও সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কগুলোয় ডাইভারশন দেওয়া হবে। প্রথমে রূপসী বাংলা মোড় থেকে বাঁ দিকে সাধারণ যানবাহনগুলোকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। পরে বাংলামোটর মোড় থেকে বাঁ দিকে মগবাজারের দিকে চলে যাবে গাড়িগুলো। ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, সকাল ১০টা থেকে মিছিলগুলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী হতে থাকবে। বেলা দুইটার পর প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনাস্থলে যাওয়ার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। এ জন্য মতিঝিল বা গুলিস্তান থেকে আসা সাধারণ যানবাহনগুলোকে প্রেসক্লাব হয়ে মৎস ভবনের দিকে যেতে দেওয়া হবে না। বিকল্প হিসেবে ফকিরাপুল হয়ে মগবাজার উড়াল সড়কের দিকে পাঠানো হবে। একইভাবে মোহাম্মদপুর থেকে আসা যানবাহনগুলোকে শাহবাগ দিয়ে বাঁ দিকে ঘুরিয়ে রূপসী বাংলার সড়কে যেতে দেওয়া হবে।
Share this content: