এবিএনএ : সিলেটের শিববাড়ীর জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’ আবসিক এলাকায়। এজন্য সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে অভিযানে কৌশলী হয়েছে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো। এখন পর্যন্ত আতিয়া মহল থেকে ৭৯ জন বেসামরিক মানুষকে জীবিত বের করে আনতে পারাটাই অভিযানের বড় সফলতা।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি গোয়েন্দা ইউনিট প্রথম আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায়। পরে তারা রেকি করে বুঝতে পারে এখানে অভিযান পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ও র্যাবও সেখানে যায়। তারাও বুঝতে পারে জঙ্গিরা বিস্ফোরণ নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। পরে ২৪ মার্চ রাতে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোকে অভিযানের দায়িত্ব দেয়া হয়। গত শনিবার সকাল ৯টা থেকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী কমান্ডো দল। জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে বাসিন্দাদের বের করে নিয়ে আসে তারা।
পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে আতিয়া মহলের ছাদে যায় সেনা কমান্ডোরা। তারা বাড়ির বিভিন্ন তলা থেকে ছাদে চলে আসা বাসিন্দাদের নিরাপদে বের করে নিয়ে আসেন। এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে যেতে মই ব্যবহার করা হয়। গতকাল রবিবার সর্বশেষ এক বৃদ্ধাকে ওই ভবন থেকে বের করে আনেন কমান্ডোরা।
কমান্ডোরা পাঁচ তলায় গিয়ে চারতলা ব্লক করে দিয়েছে। এরপর পাঁচতলার বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। একইভাবে দোতলা পর্যন্ত তারা এভাবে করেছে। আগে থেকেই সেনা কমান্ডোরা দেখতে পায়, ভেতরে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ আইইডি লাগানো হয়েছে। তাই নিচ দিয়ে না গিয়ে বাইরে থেকে গ্রিল কেটে হোল তৈরি করে ভেতর থেকে বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। সম্ভবত এই অবস্থাটা মোকাবিলা করার জন্য জঙ্গিরা প্রস্তুত ছিল না।
অপারেশন টোয়াইলাইটে ২ জঙ্গি নিহত হয়েছে। সেনা কমান্ডোরা রকেট লাঞ্চার দিয়ে ছিদ্র করে সেখান দিয়ে টিয়ারসেল ছোঁড়ার পর জঙ্গিদের জন্য আতিয়া মহলের ভেতরে থাকা কঠিন হয়েছিল। নিহত দু’জনই জঙ্গিই পুরুষ সদস্য। এখনও এক বা একাধিক জঙ্গি ভেতরে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযানের সময় জঙ্গিরা একাধিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতে করে এলাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তবে আতিয়া মহলের ভেতরে থাকা জঙ্গিরা নারী নাকি পুরুষ সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
অভিযানে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা বলেন, অভিযান হলে জঙ্গিরা মানুষের সঙ্গে মিশে যাবে- এমনটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা। ভবনটিকে তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই বেছে নিয়েছে যাতে করে ভবনের বাসিন্দাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। জঙ্গিরা খুবই উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তবে এখন তারা আটকে আছে ইঁদুর মারা কলের মতো। হয় জীবিত বের হতে হবে, অন্যথায় জীবন দিতে হবে।
জঙ্গিরা ভেতরে সুইসাইডাল ভেস্ট পরে ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্যারা কমান্ডোর ওপর হামলার চেষ্টা করছে। তবে সেনা সদস্যরা কেউ হতাহত হননি। জঙ্গিরা ভবনের বিভিন্ন স্থানে আইইডি, বিস্ফোরক রেখেছে।
জঙ্গিরা ধারণা করেছিল, সেনা কমান্ডোরা ভবনের নিচ থেকে প্রবেশের চেষ্টা করবে। সেভাবে তারা প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে সেনা কমান্ডোরা ওপর থেকে প্রবেশ করেছে। জঙ্গিদের কাছে ছোট আগ্নেয়াস্ত্রও আছে। তারা বিভিন্ন সময় সেনা কমান্ডোদের কথার জবাব দিচ্ছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, চরম ঝুঁকির মধ্যে আতিয়া মহল থেকে ৭৯ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করতে পারাটাই অভিযানের বড় সফলতা। আমাদের কমান্ডোরা ভালো টেকনিক অ্যাপ্লাই করেছিল। কারণ জঙ্গিরা আইইডিগুলো লাগিয়েছিল গ্রাউন্ডফ্লোরে, সিঁড়ি ও ভবনের ঢোকার পথে। তাই কমান্ডোরা নিচ দিয়ে না গিয়ে পাশের বিল্ডিং থেকে মই লাগিয়ে পাঁচতলা ভবনের ছাদের ওপর নেমেছে।
তিনি বলেন, এরপর আমরা যখন জঙ্গিদের লক্ষ করে গ্যাস শেল নিক্ষেপ করেছি তখন জঙ্গিদের ভেতরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছিল। তারা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। তখন ফায়ার করে দুই জঙ্গিকে নির্মূল করতে পেরেছি। আমরা নিশ্চিত যে, তাদের মৃত্যু হয়েছে। একজন শরীরে লাগানো সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান জানান, সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর এই অপারেশনে এখন পর্যন্ত সময় ব্যয় হয়েছে ৩৬ ঘণ্টা।
Share this content: