এ বি এন এ : দাম্পত্য জীবনকে চিরস্থায়ী করতে কি করতে হয়? যেখানে কোনো অনুতাপ থাকবে না। বিয়ে বা বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালত বিভিন্ন কথা বলে। এখানে জেনে নিন বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন। বিয়ে সব সময়ই একটা কঠিন বিষয়। ভারতের ২০১৫ সালের এক জরিপে বলা হয়, প্রতি ১ হাজার বিয়েতে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ১৩টি। কাজেই সময়ের সঙ্গে এটা আরো বেশি কঠিন হয়ে উঠছে। আমাদের পূর্ব পুরুষরা বিয়েকে চিরকালের বন্ধন বলে মনে করতেন। কিন্তু আধুনিক যুগের দম্পতিরা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের জন্য অন্য কিছু খোঁজেন। আগের আমলে অনেক বড় বিষয় নিয়েও হয়তো সমস্যা তৈরি হয়নি। কিন্তু এখন অতি সামান্য বিষয়ে বিচ্ছেদ ঘটে যায়। মনোচিকিৎসক ড. আভদেশ শর্মা জানান, আধুনিক যুগে অসুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ গ্রহণ করে নেওয়ার ঘটনা ২০০৩-২০১১ সালের মধ্যে বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ। আর ২০১০-২০১৪ সালের মধ্যে মুম্বাইয়ে তা হয়েছ দ্বিগুন। এদিকে, বিবাহিত জীবনের ৪০ বছর পূরণ করেছেন ওস্তাদ আমজাদ আলী খান ও সুবহামলক্ষ্মী খান। জানালেন, বিবাহের গোটা বিষয়টি নিজের হাতে নেই। এর জন্যে ধৈর্য্য, সহনশীলতা এবং বোঝাপড়া প্রয়োজন। এটা শুধু মুখের কথার বিষয় নয়। নতুন প্রজন্ম এ কাজে খুব কম সময় দেন। যদি এ জীবনের যাত্রাটা মসৃণ হয়, তবে অনেক সুখ মেলে। এতে উত্থান-পতন আসে। তবে মানিয়ে নিয়ে উপভোগ করতে হয়। বিচ্ছেদকে ‘না’ বলা : লেখিকা প্রীতি শেনয় বলেন, বিবাহিত জীবনকে দীর্ঘ করতে বিচ্ছেদকে ‘না’ বলার প্রবণতা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। হিংসাত্মক ও ক্ষোভপূর্ণ কথা-বার্তায় দুজনের মধ্যেই হতাশার সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে আলোচনা হতে পারে শান্তিপূর্ণ সমাধান। যখন আপনি ঠিক করবেন যে বিয়ে করছেন, তখন আগে থেকেই ভেবে রাখুন সমস্যার সমাধান কিভাবে করবেন। কারণ এমন কোনো বই নেই যেখানে বিয়ে টিকিয়ে রাখার নিয়ম লেখা রয়েছে। আরেক লেখক রবীন্দর সিং জানান, আজকালকার বিয়ের জন্য বোঝাপড়া আর মিলেমিশে থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। একই গান দুজন পছন্দ করা মানেই কিন্তু মনের মিল নয়। আসলে একের প্রতি অপরের টান থাকতে হবে। আমেরিকার স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদে যুক্ত যুগলরা মনে করেন, এক যুগ পরও তারা একে অপরের প্রতি দারুণ ভালোবাসার টান অনুভব করেন। সহানুভূতিতে ভালোবাসা দীর্ঘস্থায়ী হয় : বহু বিশেষজ্ঞের মতে, সহমর্মিতায় ভালোবাসা দীর্ঘ জীবন পায়। চিরস্থায়ী দাম্পত্য জীবনের জন্য ঝামেলা এড়ানোর শিক্ষা অর্জন করতে হবে দুজনকেই। কারো আগ্রাসী হলে চলবে না। দুজনের প্রতি দুজনের সহানুভূতি থাকতে হবে। এসব কথা বলেন মনোবিজ্ঞানী গিতাঞ্জলী শর্মা। প্রতিশ্রুতির নিয়ম : ভালোবাসায় পড়ার জৈবিক প্রক্রিয়া আছে। দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের জন্যেও বায়োলজি রয়েছে। নিজের মধ্যকার পার্থক্যকে উপভোগ করতে হবে। প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। ‘দ্য ম্যারেজ বেনিফিট’-এর লেখক মার্ক ও’কনেল এমনটাই মনে করেন। ‘দ্য গুড নিউজ অ্যাবাউট ম্যারেজ’-এর লেখক ম্যাগি স্কার্ফের মতে, যারা সমস্যার সমাধানে ভিন্ন পথ অবলম্বন করেন তারা দীর্ঘকাল একসঙ্গে থাকতে পারেন। মনোবিজ্ঞানের প্রফেসর ক্যারোল এস ডিওয়েক জানান, একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনী বাছাই করার অর্থ হলো অনেকগুলো সমস্যা গ্রহণ করে নেওয়া। ফ্যাশন ডিজাইনার রিনা ঢাকা বলেন, আমি ২৪ বছর ধরে বিবাহিত জীবন পার করছি। এতে লেগে থাকতে প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন। এই জীবনটা কাচের ঘরের মতো। তাই এর দেয়ালকে নিরাপত্তা প্রদান প্রয়োজন।
Share this content: