জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

মৃত ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপনের আইন না থাকায় সমস্যা হচ্ছে

এবিএনএ : মৃত ব্যক্তির অঙ্গ বিশেষ করে কিডনি প্রতিস্থাপনের আইন না থাকায় সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া হয়েছে, শিগগিরই চূড়ান্ত করতে পারবো।
বিশ্ব কিডনি দিবসের আলোচনায় বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা জানান।

চিকিৎসকদের দাবির পরপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইন দরকার, যার মাধ্যমে মেডিকেল সায়েন্স অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির কিডনি বা অঙ্গ খুলে নিয়ে অন্য একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেওয়া যায়। আমাদের আইনটা বাংলাদেশের আমলের না। যে কারণে অনেক সময় জেলের ভয়ে অনেকে করেন না, ভারতে চলে যায়। ‘আমরা কাজটি শুরু করেছি। এ ধরনের আইন করতে গিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার আছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার আছে। খসড়া হয়েছে, সামান্য ত্রুটির জন্য এটি আবার ফেরত এসেছে। আশা করছি শিগগিরই আইনটি করতে পারবো, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হবে, সংসদে পাস করতে পারবো।’ আইনটি না থাকার কারণে মৃত ব্যক্তির অঙ্গ খুলে নেওয়ার ব্যাপারে অনেক অসুবিধা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, আইনটি এমনভাবে করতে হবে যেন ফ্রেন্ড কিংবা রিলেটিভ অঙ্গ দিতে পারেন। ‘টাকার বিনিময়ে কিডনি দেবে- এটা বন্ধ করুন। বন্ধুকে বন্ধু কিডনি দেবে- এটাতে অপরাধের কিছু নেই।’অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, একবার কেউ কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে তার জীবন আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায়। তার পরিবারও শেষ হয়ে যায়। কিডনি রোগের ক্ষেত্রেও তাই। এ রোগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানান নাসিম। ধুমপান সব রোগ সৃষ্টি করে জানিয়ে নাসিম বলেন, ধুমপান করে কোনো লাভ নেই। সামান্য নেশা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি নিজে কখনও ধুমপান করিনি, সন্তানরাও করে না। …যিনি ধুমপান করেন না, তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানানো উচিত।

নার্স-চিকিৎসকদের ধর্মঘট নিয়ে নাসিম বলেন, রোগীকে টেবিলে রেখে ধর্মঘট করবেন না। মানুষের সঙ্গে ব্যবহার ভালো হচ্ছে না। স্ট্রাইক করেন না, ধর্মঘট করেন না। প্রয়োজন হলে কুশপুতুল দাহ করেন। তবু ধর্মঘট করবেন না। সরকারও বিব্রত হয়, আমরাও বিব্রত হই। দেশের চিকিৎসকদের প্রশংসা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় বৃক্ষমানবকে সুস্থ করতে পারেনি, বাংলাদেশে পেরেছে।
প্রতিবছর দেশে ৩৫-৪০ হাজার মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে জানিয়ে ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, আমরা এতো লোককে একসঙ্গে চিকিৎসা দিতে পারি না। তবে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি কিডনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত দুই কোটি মানুষের মধ্যে দুই হাজারের মতো ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে হয়েছে ৫২০টি। কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-আর-রশিদ বলেন, দুই শতাংশ লোক কিডনি অকেজো হয়ে মারা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিরোধ করা গেলে ৬০ ভাগ নিরাময় করা যায়। সফট ড্রিংক, চিনি ও অতিরিক্ত লবণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর জানিয়ে তিনি বলেন, সফট ড্রিংকস বাদ দিয়ে দুধ ও পানি খাওয়া বাড়াতে হবে।

একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরে ক্যাম্পাস সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ বলেন, পল্লী অঞ্চলে মহিলাদের শতকরা ২১ শতাংশের ওজন বেশি, পুরুষদের ১৭ ভাগের ওজন বেশি। রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ৩৩ ভাগ লোকের ওজন বেশি। রবি’র করপোরেট অফিসে সার্ভেতে দেখা গেলো ৭৪ শতাশের ওজন বেশি। তিনি বলেন, ওজন বেশি হলে কিডনির ছাঁকনি নষ্ট করে দেয়। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপকে জয় করা, কায়িক পরিশ্রম ও খাদ্যাভাস সুষম রাখার মাধ্যমে ৫০-৬০ ভাগ মানুষকে রক্ষা করতে পারবো। বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, চিত্রনায়ক ফারুক (আকবর হোসেন পাঠান) বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের মহাসচিব ডা. মো. নজরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

Share this content:

Back to top button